আসছে বাজেট ২০২২-২০২৩।১০ টাকার চাল ১৫ টাকা হবে

 

আসছে বাজেট ২০২২-২৩।১০ টাকার চাল ১৫ টাকা হবে

sainiktvnews: আসছে বাজেট ২০২২-২৩।১০ টাকার চাল ১৫ টাকা হবে

দরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয় সরকার। ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


দেশের গ্রাম এলাকায় সাড়ে ৬২ লাখ গরিব পরিবারকে ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে আসছিল সরকার। করোনা আসার পর উপকারভোগীর এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৬২ লাখ ৫০ হাজার করা হয়েছে। আর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে তাদের জন্য চালের দর কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।


মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে মাসে ১৫০ টাকা অর্থাৎ বছরের পাঁচ মাসে মোট ৭৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হবে। ১২ মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই এ চাল দেওয়া হয়। ভর্তুকি কমানোর জন্য সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।


বিদ্যুৎ, সার ও গ্যাসের ভর্তুকি কমানোর অংশ হিসেবে এগুলোর ক্ষেত্রেও মূল্যবৃদ্ধির আলোচনা রয়েছে অর্থ বিভাগে।


পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে মাথায় রেখে এ কর্মসূচি চালু করা হয়। এটিকে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর ব্র্যান্ডিং 'খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি'। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে খাদ্য অধিদপ্তর। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারপ্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবারপ্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার একটি তালিকা রয়েছে।


করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় অর্থ বিভাগ চায় ৫০ লাখ পরিবারই পাবে এ চাল। আর খাদ্য মন্ত্রণালয় চায় এই সংখ্যা অন্তত ৬০ লাখে উন্নীত হোক। এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা গেছে, সংসদে ৯ জুন বাজেট উপস্থাপনের আগে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


১০ টাকার চাল ১৫ করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, 'দেখতে হবে হবে যে অর্থ বিভাগ কোন বিবেচনায় এমন চিন্তা করেছে। না দেখে আমি কিছু বলতে পারব না।'


সরকারের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রতিবছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই পাঁচ মাস গরিব মানুষের কাজের অভাব থাকে। তাই এই পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে পরিবারগুলোকে চাল কেনার সুযোগ দেওয়া হবে। সুযোগটি দিয়েও আসছিল সরকার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাঁচ মাসের পরিবর্তে সাত মাস এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ লাখ ৩৬ হাজার টন চাল বিক্রি করা হয়েছে।


অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউই এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। কথা বলা সম্ভব হয়নি খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বিদেশে থাকায়। তবে খাদ্যসচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।


শুধু গরিব পরিবারগুলোর জন্যই যে দাম বাড়ানো হচ্ছে তা নয়, ডিলারদের কাছে সরকারের বিক্রয়মূল্যও কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার এত দিন সমতল এলাকার ডিলারদের কাছে প্রতি কেজি চাল ৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং দুর্গম এলাকার ডিলারদের কাছে ৮ টাকা দরে বিক্রি করে আসছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমতল এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং দুর্গম এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা দরে চাল বিক্রি করবে সরকার।


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তুকি নিয়ে সরকার দ্বিমুখী অবস্থানে আছে। ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে এটা যেমন ঠিক, গরিব মানুষের পাশেও থাকতে হবে, তা-ও ঠিক। সরকার ভর্তুকি কমানোর চিন্তা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলেও যথাযথ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় গরিব মানুষদের সুরক্ষা দিতে হবে।


আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৬ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অর্থাৎ ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি এবং খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) — দুটোরই ভর্তুকির অংশ রয়েছে।


খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মধ্যে গ্রামাঞ্চলের চালের ভর্তুকির পরিমাণ শহরাঞ্চল অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা সদরের ওএমএসের পরিমাণ থেকে সব সময় বেশি হয়। যেমন আগামী অর্থবছরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ভর্তুকি ২ হাজার ৫৪৪ কোটি এবং ওএমএসের ভর্তুকি ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাখা হবে। মোট খাদ্য ভর্তুকির মধ্যে এ দুটির অংশ হচ্ছে ৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।

সূত্রঃপ্রথম আলো ২ জুন ২০২২

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম