সর্বশেষ ০৪ মে ২০২৫ মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয় প্রকাশিত সংবাদ ( muktijuddha news bangladesh)sainiktvnews

সর্বশেষ ০৪ মে ২০২৫ মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয় প্রকাশিত সংবাদ ( muktijuddha news bangladesh)sainiktvnews

সর্বশেষ ০৪ মে ২০২৫ মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয় প্রকাশিত সংবাদ ( muktijuddha news bangladesh)sainiktvnews

ছবি পাল্টে বড় ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তোলেন ছোট ভাই।


টাঙ্গাইলের বাসাইলে ছবি পাল্টে জালিয়াতির মাধ্যমে বড় ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে। বড় ভাই খোরশেদ আলমের পরিবার ছোট ভাই নবাব আলীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন।


অসুস্থ হয়ে ২৫ বছর বিছানায় শয্যাশায়ী ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আবেদনের পরও এখনো পাননি প্রতিকার।

নবাব আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জমি রেজিস্ট্রি, বিবাহ রেজিস্ট্রি ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব নথিতেই তার নাম রয়েছে। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের কার্ডে খোরশেদ আলম নাম রয়েছে। নিজের বীরত্বের মর্যাদা ও সম্মানী ভাতা ফিরে পেতে চান অসুস্থ হয়ে প্রায় ২৫ বছর শয্যাশায়ী খোরশেদ আলম।


জানা যায়, উপজেলার ফুলকি মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে খোরশেদ আলম ১৯৯৭ সাল থেকে প্যারালাইজড। যে কারণে ছোট ভাইকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলনের জন্য মাঝেমধ্যেই ঢাকায় পাঠাতেন খোরশেদ আলমের পরিবার। আর এই সুযোগে ২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর নবাব আলী খোরশেদ আলমের স্বাক্ষর জাল করে নিজের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীর ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করেন। খোরশেদ আলমের মুক্তিযোদ্ধা সনদের গেজেট নং-৭২৩ এবং লাল মুক্তি বার্তায় নং- ১১৮১০০২৬০।


খোরশেদ আলমের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে দীর্ঘদিন ঘুরেও প্রতিকার পাননি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা এখনো নবাব আলী উত্তোলন করে যাচ্ছেন।


খোরশেদ আলমের মেয়ে বিলকিস কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা খোরশেদ আলম ২৫ বছর ধরে প্যারালাইজড। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বাবা অসুস্থ থাকায় চাচা নবাব আলীকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও ভাতার সব কাগজপত্র উত্তোলনের জন্য দায়িত্ব দেন। চাচা সনদ উত্তোলন করে ঠিকই এনেছে, তবে তিনি আমার বাবার স্বাক্ষর জাল করে ও তার নিজের ছবি ব্যবহার করে ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছে।


এই মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে আরও বলেন, আমার চাচা এসব তথ্য গোপন রাখার অনেক বছর পর যখন জানতে পারলাম চাচা বাবার ভাতা নিজেই উত্তোলন করে খাচ্ছে, তখন আমরা নড়েচড়ে বসি। তখন চাচা নিজেই মুক্তিযুদ্ধা দাবি করেন। তিনি নিজেই তখন খোরশেদ আলম দাবি করেন। আমার চাচা এসএসসি পাস; কিন্তু ভাতার টাকার তোলার জন্য অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়েছে। যে কারণে তার এসএসসির সনদে নাম রয়েছে নবাব আলী। এ ছাড়া চাচার বিবাহ, জমি এবং এনআইডিসহ সব নথিতে বাবার নাম উল্লেখ রয়েছে নবাব আলী। শুধু ভাতার ক্ষেত্রে তিনি বনে যান খোরশেদ আলম। এতকিছু প্রমাণ থাকার পরও সব দপ্তরে ঘুরতে হচ্ছে।

একই ধরনের অভিযোগ করেন খোরশেদ আলমের স্ত্রী মরিয়ম বেগম।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আকলিমা বেগম কালবেলাকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি ও তদন্ত চলমান। এ পর্যন্ত চারবার তদন্ত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছি। তাতে আমাদের মনে হয়েছে আবারও শুনানি করা দরকার। তারপর সেই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।সূত্র কালের কন্ঠ।

বস্তিতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান

 

বস্তিবাসী পরিবার ও তাদের শিশুরা তো বিত্তবানদের চোখের কাঁটা। অবহেলা-উপেক্ষার পাত্র তারা। নাগরিক কোলাহলে বস্তির শিশুরা যেন আবর্জনাসমÑএমন মনোভাব মধ্যবিত্ত ও বিত্তশালী প্রায় সবার। বস্তির ছেলে-মেয়েরা বেড়ে ওঠে অবহেলা, উপেক্ষা ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান ঘটিয়েছেন চমকপ্রদ এক ঘটনা, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার একক ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, একাই দৃশ্যপট পাল্টে দেয়ার প্রত্যয়ে যার সূচনা।


রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজার পেছনে নর্থ সার্কুলার রোডে পৈতৃক সুত্রে পাওয়া ফ্ল্যাট বাড়ির ড্রইংরুমে তিনি শুরু করেন এক অন্যরকম স্কুলিং কার্যক্রম; নাম ‘ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল’। যেখানে মেলে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা, যা পৌঁছে যায় শিশুমনের গভীরে, যাতে বদলে যায় জীবনের বোধ ও উপলব্ধি, সঙ্গে আচার-আচরণ; গড়ে ওঠে জীবন-ব্যক্তিত্ববোধ।


বদলে যেতে থাকে জীবন : ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের সূচনায় বদলে যেতে থাকে এলাকার বস্তিবাসী শিশুদের জীবন, যেমন বদলে গেছে হৃদয়, আকাশ, শিরিন, সাবরিনা ও রুবেলদের মতো আরও অনেকের জীবনের দিনলিপি। বস্তির ছেলে-মেয়ের জীবন এবং তাদের পরিবারগুলোতে শিক্ষার আলো ছড়াতে আজও নিয়মিত চলে এক দিনের স্কুল ফ্রি ফ্রাইডে। তাই তো দায়বদ্ধতার মানবজীবনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে সোলায়মানের ‘ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল’। মাত্র এক দিনের স্কুলে এখন পাঠদান হয় শনিবারেও; সেইসঙ্গে সরকারি ছুটির দিনেও।


বিরোধিতার মুখে সূচনা : গৃহ অভ্যন্তরের বিরোধিতার মুখে ‘ফ্রি ফ্রাইডে’ শুরু করেছিলেন সোলায়মান সাহেব। এখন সাহেব-পত্নীও বস্তির বাচ্চাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিয়েছেন এবং মমতাময়ী মায়ের মতো তাদের পাঠদান করান। একেবারে সোনায়-সোহাগা; স্বামীর পাশে সমমনা ও যোগ্য সহধর্মিণী। বস্তিবাসী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের সূচনা ২০০৭ সালে।

এক বন্ধুর কাছ থেকে এমন সুখবর শুনতে পেয়ে এক শুক্রবার বিকালে তা দেখতে যাই এবং চমকিত হই। কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসে একজন মুক্তিযোদ্ধার মহান কীর্তিতে। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

১৭ পেরিয়ে ১৮-তে ফ্রি ফ্রাইডে : ১৮ বছর পর, ২০২৫-এ ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের অবস্থা জানার আগ্রহ জাগে। ছুটে যাই সোলায়মান ভাইয়ের মতিঝিলের অফিসে, খাদিজা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসে। আলাপচারিতায় যা জানালেন তাতে মনটা আনন্দে ভরে গেছে। গত ১৭ বছর নিয়মিতভাবে বহু বস্তিবাসী ছেলেমেয়ের হাতেখড়ি হয়েছে। শিক্ষার আলো পেয়েছে তারা। জীবন বুঝতে শিখেছে বস্তির শিশুরা, শিক্ষা ও দক্ষতায় আজ সমৃদ্ধ হয়েছে তারা। অনেকে আবার কতদূর গিয়ে ঝরেও পড়েছে, যদিও তা যৎসামান্য।

শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত জীবন : জীবন বদলের গল্পটার আপডেট হলোÑফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের শুরুর দিকে এন্ট্রি নিয়েছিল যেই বস্তিবাসী ছেলেটি কিংবা মেয়েটি, তারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন উচ্চতর শিক্ষার সনদ। তাদের অনেকেই পেয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবনের স্বাদ। খুঁজে পেয়েছেন জীবনের অন্যরকম মানে।


সেদিনের দেখা ছোট্ট ‘আকাশ’ নামের ছেলেটি বিএ পাস করে এখন বসুন্ধরা গ্রুপে কর্মরত, যে ছিল আমার প্রথম দেখা ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের ছাত্র। সিটি কলেজ থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক শেষ করে ‘রুবেল’ বর্তমানে চাকরি করছে একটি এনজিও’তে। বিএ (অনার্স) পাস করে বিয়ে করেছে ‘শিরিন’ এবং বর্তমানে অধ্যয়ন করছেন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে। ‘সাবরিনা’ সিটি কলেজ থেকে বিএ পাস করে কর্মরত আছেন বাংলালিংকে। হৃদয় নামের ছেলেটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) থার্ড ইয়ারে পড়ছেন। এভাবে জানলাম অন্য অনেকের কথা। স্থান সংকুলানের অভাবে সেসব না-বলাই রইল। তবে এটুকু বলা জরুরি যে, আনন্দময় শিক্ষা জীবন বদলে দেয় ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি।


সংকটের পিঠে সম্ভাবনা : ছিন্নমূল বস্তিবাসী শিশুদের সংকটটি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সোলায়মান উপলব্ধি করলেন এবং তিনি তাদের আপন করে নিলেন। নিজের ফ্ল্যাটবাড়ির ড্রইং রুমে ঠাঁই দিলেন একদল বস্তিবাসী ছেলেমেয়েকে। শিক্ষার আলোয় বস্তিবাসী শিশুরে জীবনকে আলোকিত করার তাগিদ থেকে শুরু করেছিলেন ‘ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল’-এর ধারণায় এক দিনের স্কুলিং কার্যক্রম। হাতেখড়ি দিলেন অবহেলিত উপেক্ষিত শিশুদের। শুরুতে সোলায়মান-পত্নী বিরক্ত হলেও স্বামীর গভীর আগ্রহে পরে নিজেও শামিল হলেন শিক্ষাদানের মহতী উদ্যোগে। স্বামীর অবসরের দিনগুলোয় দুজনে মিলে কোমলমতি শিশুদের মনগড়ার কাজটি করেন। বাংলা, ইংরেজি আর অঙ্ক ছাড়াও শেখান এমন কিছু যাতে তারা ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারেন, সমাজ ও দেশের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারেন।


সংঘাত থেকে সম্পর্ক : সংঘাত থেকেই নিবিড় সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল মোহাম্মদ সোলায়মানের সঙ্গে বস্তিবাসী শিশুদের। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে পৈতৃক বাড়ির নিবাসী তিনি। নির্ঝঞ্ঝাট জীবনপ্রত্যাশী সোলায়মান সাহেব বিরক্ত হতেন বস্তিবাসী শিশু-কিশোরদের দুরন্তপনায়, যখন একে অপরকে তাড়া করতে গিয়ে ছুটতে ছুটতে গায়ের ওপর এসে পড়ে ওরা। তাদের শাসনহীন লাগামছাড়া খিস্তি-খেউরে বিরক্ত হয়ে শুরুতে ধমক ও দু-একটা চড়-থাপ্পড় দিতেন। নিয়মিতই এমনটি হতো।

একসময় সোলায়মান সাহেবের বোধোদয় হলো। তিনি উপলব্ধি করলেন সংকটের গভীরতা। শিক্ষাহীন জীবনের গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসছে বস্তিবাসী এই ছেলে-মেয়েরা। একমাত্র শিক্ষাই পারে এই শিশুদের জীবন বদলে দিতে। তাই কিছু একটা করতে হবে। ‘ডু অর ডাই’-এর ট্রেনিংটা তো তিনি পেয়েছেন আর্মিতে থাকাকালে এবং একাত্তরের যুদ্ধের রণাঙ্গনে।


অবসরকে দিয়ে ছুটি : যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। বার্ধক্যের অখণ্ড অবসরকে বিদায় জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান ২০০৭ সালে নিলেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। বস্তির ছেলেমেয়ে একেকজনকে পাকড়াও করে তাদের বস্তির ঘরগুলোয় বাবা-মায়ের কাছে ছুটে যান তিনি। কারও বাবা ভ্যানচালক, কারও বাবা ফুটপাতের দোকানি, কারও মা হোটেল মশলা বাটেন, কেউ আবার কাজের বুয়া। অনুসন্ধানে তারা জানালেন, ইচ্ছা থাকলেও সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের সামর্থ্য তাদের নেই। তিনি উপলব্ধি করলেন, ‘শিক্ষার অধিকারের’ নামে স্বাধীন স্বদেশেই চলছে প্রহসন।


যেভাবে শুরু ফ্রি ফ্রাইডের : ব্যক্তি, সমাজ, সরকার কিংবা রাষ্ট্রÑকারও যেখানে কোনো দায় নেই, সেখানেও দায়বোধের তাড়নায় এগিয়ে আসেন কেউ। মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান সাহেব তাই করলেন! নিজেই উদ্যোগী হলেন তিনি। বস্তিবাসী বাবা-মায়েদের বুঝিয়ে, অনুরোধ করে সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি।


২০০৭ সালের এক শুক্রবার নিজ অর্থে কেনা বই-খাতা ও পেন্সিলের জোগান দিয়ে শুরু করলেন সপ্তাহের এক দিনের অন্যরকম স্কুলিং কার্যক্রম। নাম দিলেন ‘ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল’। লেখাপড়ায় আগ্রহী করে তুলতে নিয়মিত বিস্কুট, চকলেট, ক্যান্ডি ও চিপসের ব্যবস্থা করেন নিজ অর্থে। আবার কখনও গিন্নির হাতের মজাদার খাবার পরম মমতায় পরিবেশন করেন বস্তিবাসী শিশুদের। কখনও একসঙ্গে বসে নিজেরাও খেয়ে নেন।


কোথায় কীভাবে হলো লেখাপড়া : কখনও মোহাম্মদ সোলায়মানের পৈতৃক নিবাসের ড্রইং রুম, কখনও গাড়ি পার্কিংয়ের ফাঁকা জায়গা। আবার কখনও রোদহীন অপরাহ্নে বাড়ির ছাদেই চলে ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের লেখাপড়া। এই স্কুলের বাঁধাধরা সময় নেই। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কোনোদিন ১০-১২ জন তো কখনও ২০-২৫ জন ছাড়িয়ে যায়। তারাই সুবিধামতো নির্বাচিত স্থানে টেনে-হিঁচড়ে সানন্দে জড়ো করে নেন আকিজ প্লাস্টিকের টেবিল, চেয়ারসহ আনুষঙ্গিক শিক্ষাসামগ্রী।

যেহেতু একই মহল্লায় বসবাস ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের; ফলে প্রয়োজন হলে যখন তখন বই-খাতা নিয়ে চলে আসে দাদুর কাছে।


আনন্দময় পাঠদান ও পাঠগ্রহণ : নবীন-প্রবীণের খুনসুটির মাঝেই চলে আনন্দময় পাঠদান ও পাঠগ্রহণ। স্বর্গীয় অনুভবে মাখামাখি যেন ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের আবহ। এখানে হাতেখড়ির পর সবাই আবার নিকটস্থ সরকারি স্কুল কিংবা সস্তার কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়ে ওঠে। সোলায়মানের ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল হয়ে ওঠে বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষার প্রথম সোপান। ২০০৭ থেকে ২০২৫-অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এই আয়োজনে বদলে গেছে বস্তিবাসী সহস্র শিশুর জীবন। আলোকিত জীবনের ছোঁয়ায় বদলেছে বহু বস্তিবাসী পরিবার।


বয়োবৃদ্ধ দম্পতি ও বস্তির দুরন্তপনা শিশুর দল : ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প-আড্ডায় মাতে এক বয়োবৃদ্ধ দম্পতি এবং কতগুলো কঁচিকাচা শিশুমুখ। রক্তের সম্পর্ক নেই, তবুও আপন হয়ে উঠে তারা। জনাব সোলায়মানের বার্ধক্যের অখণ্ড অবসরের পানসে দিনগুলো এখন কেটে যায় আনন্দ-উদ্দীপনায় ও হাসি-তামাশায়। পরস্পরের সম্পর্ক গত ১৭ বছরে গড়িয়েছে নানা-নাতি ও দাদা-দাদিতে।


এদিকে সোলায়মান দম্পতির ঔরসজাত একমাত্র পুত্র সস্ত্রীক নাতিকে নিয়ে থাকেন দূর অস্ট্রেলিয়ায়। স্কলারশিপ নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমানো একমাত্র পুত্র এখন সেখানেই থিতু হয়েছেন। আর সহধর্মিণীকে নিয়ে সোলায়মান স্থায়ীভাবে বাস করেন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া রাজধানীর নর্থ সার্কুলার রোডের বাড়িতে। এখানেই বস্তিবাসী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন তিনি।


এবার সোলায়মান-নামা : মোহাম্মদ সোলায়মান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বাবা ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক। বর্তমানে খাদিজা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক তিনি। বাংলাদেশ আর্মির অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট এবং বাংলাদেশ বিমানের সাবেক কমার্শিয়াল অফিসার মোহাম্মদ সোলায়মান। সংখ্যার গণনায় ৭০ পেরুলেও বহু তরুণের চেয়ে তেজোদ্দীপ্ত এই প্রবীণ। একাত্তরে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন অকুতোভয়ে। সম্মুখ যুদ্ধে মরতে গিয়েও বেঁচেছেন কয়েক দফা। এরপর দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্যি, কিন্তু মুক্তি আসেনি। শিক্ষার আলোয় পৌঁছেনি প্রতিটি ঘরে। অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি নাগরিক জীবনের প্রতি পলে। কিন্তু বৈষম্যের দৃশ্যপটে সুউচ্চ অট্টালিকা সারি সারি দাঁড়িয়ে গেছে। এরই ফাঁকে ফাঁকে ঝুঁপড়ি, দোচালা, একচালা কিংবা পলিথিনের ছাউনিতে জীবনের কোলাহল। বস্তিবাসী পরিবার ও তাদের সন্তান-অন্যরকম যুদ্ধ-সংগ্রামের আখ্যান। একজন মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মানের দৃষ্টিতে এটি স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ নয়, বরং স্বপ্নের বিভ্রম।


রিটায়ারমেন্ট শব্দের নির্বাসন জীবন থেকে : নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেমনটি বলেছেন, ‘রিটায়ারমেন্ট’ শব্দটিকে জীবন থেকে মুছে দিতে হবে। অবসর বলে কিছু নেই। শেষ বয়সেও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে।


মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সোলায়মান যেন মহামনীষী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উক্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সত্যি তিনি ‘রিটায়ারমেন্ট’ শব্দটিকে জীবন থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন। ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল নামে শিক্ষার যে সোপান তুলেছেন তিনি, তা তার বার্ধক্যের ভারটুকু লাঘব করেছে। ঔরসজাত সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সান্নিধ্য না পেলেও বস্তিবাসী শিশু-কিশোররাই এখন তার আপনজন হয়ে পাশে থাকে, ঘিরে রাখে। অসুখ-বিসুখে সোলায়মান দাদুর পাশে থাকে বস্তির ছেলেমেয়েগুলোই, তাদের প্রাণে বাজে প্রার্থনার সুর।


সারকথা : বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতাকে যারা আলিঙ্গন করতে না চান, তাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মানের ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের ধারণা হতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস। নিঃস্ব ও সামর্থ্যহীনদের শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর আনন্দ-উদ্ভাসিত প্রফুল্লতায় বার্ধক্যের ভার লাঘব হবে নিশ্চিত। বদলে যাওয়া ও বদলে দেয়ার পরম্পরায় সমৃদ্ধ হতে পারবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। তবেই নতুন বাংলাদেশের জাগরণ, হবেই নিশ্চিত।সূত্র শেয়ার বীজ 



মুক্তিযোদ্ধা চাচার কোটায় ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন তানিয়া।

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বোরণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঢাকী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিযুক্ত তানিয়া আক্তারের চাচা মো. শরিফুল ইসলাম।


তানিয়া আক্তার বর্তমানে মিঠামইন উপজেলার বোরণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন।


উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, তানিয়া আক্তার ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১৫ বছর ধরে সরকারি বিধি মোতাবেক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুক তার আপন ছোট ভাই জিতু মিয়ার মেয়ে তানিয়া আক্তারকে নিজের মেয়ে সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করার সুযোগ করে দেন। সহকারী শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বাবা জিতু মিয়া এখনও জীবিত আছেন। 


ঢাকী ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ওয়ারিশান সনদ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের শারমিন স্মৃতি, রোজিনা বেগম ও রুনি আক্তার নামে তিন মেয়ে আছে । এছাড়াও সহকারী শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের এনআইডি কার্ডে দেখা যায় পিতা গোলাম ফারুক লেখা থাকলেও মায়ের নাম হেলেনা বেগম। মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের মেয়ে রোজিনা বেগম ও রুনি আক্তারের এনআইডি কার্ডে দেখা যায় পিতা গোলাম ফারুক লেখা থাকলেও মায়ের নাম লেখা লজ্জত বেগম। তার মানে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের স্ত্রীর নাম লজ্জত বেগম আর গোলাম ফারুকের ছোট ভাই জিতু মিয়ার স্ত্রীর নাম হেলেনা বেগম। এসব অভিযোগেই কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তানিয়া আক্তারের চাচা ও গোলাম ফারুকের আরেক ভাই মো. শরিফুল ইসলাম।


এ বিষয়ে জানতে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুকের বাড়িতে গেলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, সাংবাদিক আসার খবরে দরজা বন্ধ করে চলে গেছে তার পরিবারের লোকজন।


মুঠোফোনে গোলাম ফারুকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি এলাকায় নাই, অনেক দূরের হাওরে চলে গেছেন। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাকে বাড়ির সামনে ধান ক্ষেতে দেখা যায়। সেখানে তার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি তানিয়া আক্তারকে নিজের সন্তান হিসেবে জোর দাবি করেন। একজন মেয়ের দুইজন জীবিত পিতা কীভাবে থাকতে পারে, এইসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।


অভিযুক্ত তানিয়া আক্তারে কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু মানুষ শত্রুতা করে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। এইসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।


মিঠামইন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাদিকুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিষয়টি তদন্ত করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।


তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।তথ্য বাসস 


বগুড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকনের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে আক্কেলপুরে।


আক্কেলপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ খোকনের কবরস্থানে প্রায় টাকা কোটি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ। বগুড়া শহরের পাইকার পরিবারের সন্তান খোকন ১৯৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ প্রত্যয় নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিলেন।


আক্কেলপুরে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র তাকে ধরে মাদরাসা ক্যাম্পে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পৌর সদরের সেই মাদরাসা ক্যাম্পে তাকে নির্মমভাবে শারীরিক টর্চার করে পাকবাহিনী। তারপর সেখান থেকে মাদরাসা ক্যাম্প থেকে কিছ ুদূরে সিএন্ডবি রাস্তার ধারে উচু ভূমিতে কবর খুরে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। মৃত্য নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে মাটি চাপা দেয় সেখানেই।


আর সেই কবরটি খুড়েছিল ওই এলাকার দুলু নামের এক ব্যক্তি। মৃত্যুর আগে খোকন সেই দুলুকে বলেছিল ‘আমার বাড়ি বগুড়া শহরের পাইকার পরিবারে। যেন মৃত্যুর খবরটি তার পরিবারকে দেওয়া হয়। অবশেষে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সেই ভূমিতে ১২ শতাংশ সরকারি জমিতে গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫ টাকা ব্যয়ে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাবর অ্যাসোসিয়েটস নির্মাণ কাজ করছেন, যা আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা।তথ্য করতোয়া






নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম