রংপুর পীরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার নাতির পরিচয় দিয়ে চাকরি নেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে তার মাকে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে পরিচয় দিয়ে নিকাহনামা প্রদান করায় নিকাহ রেজিস্ট্রার আবু তালেব ও ভুয়া পরিচয়পত্র প্রদান করায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রধানের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। রংপুর দুদকের সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেন আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন
তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সম্পদ জব্দ করার জন্য ক্রোকি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেছেন।
রংপুর আদালতে দুদকের কৌঁসুলি হারুন উর রশীদ আদালতে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে অভিযোগ করা হয়েছে, শরীফুল ইসলাম বর্তমানে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিরত আছেন। তার বাবার নাম তোজাম্মেল হোসেন, বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হযরতপুর কাজীপাড়া গ্রামে।
অভিযোগে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ি ফার্মগেট, ঢাকা ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর ৭৩৬ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-মেয়ে এবং ছেলে-মেয়ের ছেলে ও মেয়ের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তির শর্ত মোতাবেক আসামি শরীফুল ইসলাম উক্ত পদে মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় আবেদন করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩১ বছর ৬ মাস ১৪ দিন হলেও মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় তাকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে যোগদান করেন। চাকরির আবেদন করার সময় শরীফুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলী, বাবা মৃত বছির উদ্দিন, গ্রাম গজারিয়া, থানা সাঘাটা, জেলা গাইবান্ধা সম্পর্কে তার নানা দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্রসহ অন্য কাগজপত্র দাখিল করেন।
তদন্তকালে জানা গেছে, শরীফুলের মা সকিনা বেগম মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলীর মেয়ে নন। তারপরও এই কর্মকর্তা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাঘাটা থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সোলেমান আলীর মুক্তি বার্তার সনদটিও ভুয়া।
তদন্তে আরও জানা গেছে, শরীফুল তার মা সকিনা বেগমকে মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর মেয়ে বানিয়ে ভুয়া নাতি সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। এ ঘটনায় দুদক রংপুর কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক এ কে এম নুর আলম সিদ্দিক বাদী হয়ে দুদক আইনে ২০২১ সালের ২৩ জুন মামলা করেন। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামি শরীফুল উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক রংপুরের উপ সহকারী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন।
এ বিষয়ে দুদকের এই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলাটি তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় আদালতে বিচারের জন্য চার্জশিট দেওয়ার কথা জানান।
সূত্র বাংলা ট্রিবিউন