মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির তথ্য প্রদানে গড়িমসি।মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরির তথ্য দিতে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট কিছু মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। এমন তথ্য তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী এ পর্যন্ত বিয়াল্লিশ টি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের দশ হাজার ৭শত একাত্তর জন কর্মকর্তার নামের তালিকা পাওয়া গেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত ছক অনুযায়ী তথ্য মেলেনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, গত পনেরো আগস্ট সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজন চাকরি পেয়েছেন, এর তালিকা চেয়ে সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল তারা।
কোনো মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় ঊনত্রিশ আগস্ট ফের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে পনেরো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমার এক মাস পরও সব মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরসহ প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে।
তাগিদপত্র দেওয়ার পর নির্ধারিত সময়সীমা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। আমরা এখন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ভাগ করে দিয়েছি। তাঁরা সরাসরি ফোন করে তথ্য নিচ্ছেন। পিএসসির (সরকারি কর্মকমিশন) কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাদের কাছে বিসিএস বাইশতম ব্যাচ থেকে বিয়াল্লিশ তম পর্যন্ত তথ্য আছে। আগের তথ্য দিতে পারেনি। এ ছাড়া অনেকে আমাদের পাঠানো ছক অনুযায়ী তথ্য দিতে পারেনি।’
গত ৮ আগস্ট ডক্তর. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম। এরপর গত পনেরো আগস্ট সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি তালিকা তৈরি হবে।
সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ না করে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য সব মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরে চিঠি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে।
পনেরো আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ক্যাডার-নন ক্যাডার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য চেয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। এতে সরকারি চাকরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠাতে বলা হয়।
এরপর ঊনত্রিশ আগস্ট ফের তাগিদ দিয়ে দুটি চিঠি পাঠানো হয় সব মন্ত্রণালয়ে। একটিতে প্রথম শ্রেণি (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের তথ্য চাওয়া হয়। অপরটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে তার মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/সংস্থা/করপোরেশন/দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্তদের তথ্য জরুরিভিত্তিতে তালিকা পাঠাতে বলা হয়।
পনেরো আগস্টের চিঠির স্মারক উল্লেখ করে ওই চিঠিতে পনেরো সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্যাদি পাঠানো নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়।এরপর আরো এক মাস পেরোলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তথ্য পৌঁছেনি। এ পর্যন্ত যেসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুরক্ষা সেবা বিভাগের দুই হাজার তেতাল্লিশ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে দুই হাজার চয়ইত্রিস জন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ৫শত বিরাশি জন, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৫শত চুচট্টি জন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ৪শত বাষট্টি জন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৪শত উনা নববই জন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ২শত আঠারো জন, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগের ১শত৬ জন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১শত৬ জন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৫শত বিয়াল্লিশ জন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৯শত তেতাল্লিশ জন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ৩শত৩ জন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩শত ত্রিশ জন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১শত একাত্তর জন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১শত চুয়াত্তর জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১শত শোল জন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের ১শত নিরানব্বই জন এবং পিএসসি সচিবালয়ে ত্রিশ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু মন্ত্রণালয় কোনো তালিকাই পাঠাচ্ছে না। টেলিফোনে সংশ্লিষ্ট ডেস্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা তেমন গা করছেন না। বিশেষ করে পিএসসির কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলেও তারা নানা অজুহাতে তথ্য পাঠাতে গড়িমসি করছে।
এ বিষয়ে পিএসসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিসিএস একুশ তম ব্যাচ থেকে আগের ব্যাচের কর্মকর্তাদের তথ্য নিয়ে কাজ চলছে। খুব দ্রুত এসব তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে।