মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও তাদের জীবনমান উন্নত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিশেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যাকিছু করণীয় সরকার অবশ্যই করবেন।
আজ বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কক্ষে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এক প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান লেখক গবেষক আবীর আহাদের নেতৃত্বে সংগঠনের ১৪জন সদস্য এসময় উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে আবীর আহাদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লক্ষ বাঙালি এবং শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে মতবিনিময় সভার কার্যক্রম শুরু করেন। শুরুতেই সংগঠনের পক্ষ থেকে মন্ত্রী মহোদয়কে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান হয়। সংগঠনের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে প্রতিনিধিদলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে পরিচয় করে দেন। প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদসরা হলেন সর্ববীর মুক্তিযোদ্ধা হাশেম আলী, সাংবাদিক সরোয়ার জাহান, আলী আহমেদ, আবদুল মমিন সরকার, গাজী মিজানুর রহমান, কাজী লিয়াকত আলী, রমিজউদ্দিন আহমদ, মো; আলী হোসেন, রেখারাণী গুণ, আবু তাহের মীর্জা প্রমুখ।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্দেশ্যে গত ৩১ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশকৃত ৮ দফা সম্বলিত স্মারকলিপির কথা উল্লেখ করেন, যার কপি মন্ত্রী মহোদয়কেও প্রদান করা হয়েছিলো। তিনি পেশকৃত স্মারকলিপির সূত্র ধরে একটা প্যাকেজ আওতায় দাবিগুলো তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সুরক্ষা আইন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকার মধ্যে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা উচ্ছেদ ও তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার, বঙ্গবন্ধু সরকারের ৭২ সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে উচ্চ আদালত ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিশন গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন, যৌক্তিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সাথে সংগতি রেখে মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ভাতা বৃদ্ধি, প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা, গুরুতর রোগে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের বিনাসুদে ২৫ লক্ষ টাকা গৃহঋণ, শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবস ও বৈশাখী ভাতা প্রদান। এ ব্যতীত ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা না হওয়া পর্যন্ত ডিজিটাল সনদ ও আইডি কার্ড এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন স্থগিত রাখারও দাবি জানান।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয় অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আবীর আহাদ উত্থাপিত দাবিগুলো শ্রবণ করেন এবং এসবের ওপর খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং সুরক্ষা আইনের বিষয়ে একমত প্রকাশ করে সংবিধানের কোথায় এবিষয়গুলো সংযোজন করা উচিত, সে বিষয়ে তাঁর কাছে সুপারিশ পেশ করার পরামর্শ দেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিশন গঠনের বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে তিনি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট উত্থাপন করবেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, চিকিত্সা ভাতা, শহীদ ও মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবস ও বৈশাখী ভাতার বিষয়টি তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা পেতে পারে সে ব্যাপারে তিনি সচেষ্ট থাকবেন।
গৃহঋণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, সরকার ৩% সুদে ২০ লক্ষ টাকার গৃহঋণ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা অচিরেই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এসময় আবীর আহাদ বিনাসুদে ২৫ লক্ষ টাকা গৃহঋণের দাবি তোলেন। মন্ত্রী বিষয়টি সুবিবেচনার আশ্বাস দেন। সর্বোপরি তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উপরোক্ত সব দাবি একত্রিত করে তাঁর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশ করার জন্যে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে পরামর্শ দেন। সেটি নিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করবেন বলে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন।
সুত্রঃউত্তরাধিকার৭১নিউজ