বিভ্রান্তির অবসান: নতুন মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্পর্কে জানা জরুরি তথ্য

মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়নি, বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে 

ভ্রান্তির অবসান: নতুন মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্পর্কে জানা জরুরি তথ্য


 সম্প্রতি একটি গেজেট প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিবনগর সরকারের শীর্ষ নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাক্টচেক ও তথ্য অনুসন্ধানে এই খবরের সত্যতা নেই বরং এটি একটি পরিকল্পিত মিথ্যাচার।  

 শেখ মুজিবসহ জাতীয় নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বহাল  

আসলে কী পরিবর্তন এসেছে?

নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় যে সংশোধন আনা হয়েছে, তা ১৯৭২ সালের তৎকালীন সংজ্ঞার ভিত্তিতে করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালের কিছু সংশোধিত সংজ্ঞা ছিল বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর। এবার সেটিকে সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের মূল আত্মা ও বাস্তবতাকে ফিরে আনা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।”

কে হবেন 'সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা'?

যাঁরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সংগঠক, প্রচারক, চিকিৎসক, কূটনীতিক, সাংবাদিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন—তাঁদের 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে তাদের মর্যাদা বা সম্মান কোনওভাবেই খর্ব হয়নি। বরং একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস আরও সংরক্ষিত ও শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা

গণমাধ্যমে প্রকাশিত "মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল" বা "মুজিবনগর সরকারের সব নেতার স্বীকৃতি বাতিল" শিরোনামটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ, বাংলাফ্যাক্ট, রিউমার স্ক্যানার—সবাই এই দাবি নাকচ করে বলেছে, এই খবর সম্পূর্ণ গুজব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম পরিষ্কারভাবে বলেছেন, “মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা, এটা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। নতুন সংজ্ঞা তাদের মর্যাদা আরও সুস্পষ্ট করেছে।”

সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদসহ নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল ফেইক নিউজ। বিভ্রান্তি ছড়ানো উদ্দেশ্যমূলক।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, “রণাঙ্গনের যোদ্ধা ও সংগঠকের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকা উচিত। এই সংশোধন বাস্তবধর্মী ও সময়োপযোগী।”

নতুন সংজ্ঞায় আরও কারা অন্তর্ভুক্ত?

  • বীরাঙ্গনা

  • যুদ্ধকালীন চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সহকারী

  • স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী

  • মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিক

  • স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল

উপসংহার:

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের এই নতুন অধ্যাদেশ কোনওভাবেই মুজিবনগর সরকারের নেতাদের সম্মান হ্রাস করেনি বরং মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস করে সম্মান রক্ষা করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতা চিরকাল বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

এ বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার থেকে দূরে থেকে যাচাই-বাছাই করে তথ্য গ্রহণ করাই সময়ের দাবি।


নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম