নোয়াখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পের দরপত্র বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ

  নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের দরপত্র বিক্রিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।


দরপত্র কিনতে না পেরে ঠিকাদারদের একটি দল পিআইওর বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে মঙ্গলবার বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সেনবাগ ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১০৬ জন দরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণ কাজের জন্য সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত দরপত্র বিক্রির শেষ সময় ছিল।

দরপত্র অনুযায়ী ১০৬টি ঘর ২১টি গ্রুপে নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি দরপত্রের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার টাকা।সেনবাগ উপজেলা বাসিন্দা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শান্তনু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল মতিনসহ ৬ জন ঠিকাদারের অভিযোগ, প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পে পিআইও অখিল শিকারী এবং ইউএনও নাজমুন নাহার স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মাত্র ৮ জন ঠিকাদারের কাছে গোপনে দরপত্র বিক্রি করেন।তাদের অভিযোগ, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তারা ৬ জন ঠিকাদার দরপত্র কিনতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। এ সময় পিআইও কর্মস্থলে না থাকায় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি তাদের কাছে দরপত্র বিক্রি করবেন বলে আশ্বাস দিলেও, বিকেল ৪টার পর পিআইও তার কার্যালয়ে এসে বলেন দরপত্র বিক্রির সময় সাড়ে ৩টায় শেষ হয়ে গেছে।

ঠিকাদার আবদুল মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইউএনও এবং পিআইও স্থানীয় অসাধু ঠিকাদার সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প নামমাত্র খরচে করিয়ে নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে গোপনে দরপত্র বিক্রি করেছেন।'

'গোপনে' বিক্রি হওয়া দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবান করার দাবি জানান তারা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অখিল শিকারীর বিরুদ্ধে সেনবাগ উপজেলার একাধিক ঠিকাদার ও উপজেলা পরিষদের কর্মীরা অনেক আগে থেকেই অনিয়মের অভিযোগ করে আসছেন বলে উল্লেখ করেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে সেনবাগ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আহাম্মদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার উপজেলার ১৭টি দপ্তরকে পরিষদের কাছে ন্যস্ত করেছে। সে হিসেবে ইউএনও এবং পিআইও উপজেলা পরিষদের অধীনে। কিন্তু আমাকে অন্ধকারে রেখে ইউএনও ও পিআইও গোপনে বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র আহবান করেছেন। এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার বিষয়েও জানি না।'

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অখিল শিকারী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকজন ঠিকাদার শিডিউল বিক্রির শেষ দিন নির্ধারিত সময়ের পরে এসেছিলেন। তাই তাদের কাছে শিডিউল বিক্রি করা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঢাকায় থাকার কারণে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কবির এই প্রকল্প সম্পর্কে অবগত আছেন।'

যোগাযোগ করা হলে ইউএনও নাজমুন নাহার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শেষ দিন সাংবাদিকরা আমাকে ফোন দিয়ে শিডিউল কিনতে না পারার বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু তখন অফিস সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু করা যায়নি।'

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, 'চেয়ারম্যান সাহেব তো অফিসই করেন না। তিনি সারা বছর থাকেন ঢাকায়। এ কাজে গোপনীয়তার কিছু নাই।'

অভিযোগের বিষয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো

সূত্র ঃ ডেইলি স্টার ২৬ এপ্রিল ২০২২ 

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম