২৭ এপ্রিল ২০২২ প্রকাশিত গেজেট প্রজ্ঞাপন
ছয় ফুট বাই আট ফুটের ছোট্ট ঘরে পুরনো টিনের চাল থাকলেও চারপাশে ছিল না বেড়া। সেই ঘরে পুরনো ছেঁড়া-ফাটা কাপড় ও চট দিয়ে ঘেরাও দিয়ে ভেতরে ঘুমাতেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় দাস। বৃষ্টি হলে ঘরে ঝরঝর করে পড়ত পানি। শীতে ভেতরে বইত কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও গত ৫০ বছরে ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি গাজীপুর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত বাড়িয়া গ্রামের ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, ছেলে ও দুই নাতি নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার।
যুদ্ধের সময় বিজয় দাস ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র। ১৪ মে গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যা, তাঁর ঠাকুরমাসহ দুই শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যা করে পাক বাহিনী। ওই দিনই শপথ নেন, যারা বৃদ্ধ নিরপরাধ ঠাকুরমাকে হত্যা করেছে, গ্রামের মানুষকে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে, যুদ্ধে গিয়ে তাদের খতম করে প্রতিশোধ নেবেন, দেশ স্বাধীন করবেন।
মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণের জন্য ভারতে গেলে শারীরিক গঠন এবং প্রশিক্ষণ দক্ষতা দেখে তাঁকে ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক পদে ভর্তি করে নেয় প্রবাসী সরকারের সেনাবাহিনী। যুদ্ধে তাঁর কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন নাসিম, যিনি পরে সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। দেশের আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস যুদ্ধ ও আশুগঞ্জ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। দেশ স্বাধীন হলে তিনি সেনাবাহিনীতে চলে যান। ছয় মাস পর ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি ছুটিতে বাড়ি আসার পর মা-বাবা তাঁকে আর চাকরিতে যেতে দেননি।
বিজয় দাস জানান, সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে চলে আসা ছিল তাঁর জীবনের সেরা ভুল। ওই ভুলের মাসুল তাকে সারা জীবন দিতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, চাকরি ছেড়ে আসার পর আবার লেখাপড়া শুরু করেন। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থাভাবে আর বিএ পাস করা হয়নি। বহু ঘোরাঘুরি এবং চেষ্টা করেও কোনো সরকারি চাকরি পাননি। কিছুদিন একটি বেসরকারি কারখানায় নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন। সংসারজীবনে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা হন। মেয়ে বড়। বিয়ে দিয়েছিলেন পাশের গ্রামে। সাত ও আট বছরের দুই সন্তান রেখে মেয়ে স্মৃতি রানী দাস গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে দুই নাতির ভরণ-পোষণও তাঁর ওপর পড়ে।
সূত্র ঃ কালের কন্ঠ ২৬ এপ্রিল ২০২২