মুক্তিযোদ্ধা সনদে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির
বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সরকার এক চরম বিভ্রান্তিতে ভুগছে মন্তব্য করে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ভুল নিয়ে সরকার দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়টি না বুঝার জন্যে কি সরকারে কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের অভাব দেখা দিয়েছে? তাই যদি না হবে, তাহলে সংবিধানে যেখানে বলা হয়েছে,"জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি"----সেখানে সাম্প্রতিক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদত্ত সনদপত্রে বলা হয়েছে "স্বাধীনতা যুদ্ধে"র কথা! কিন্তু আমরা, দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসী সবাই জানি 'সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে'র মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, প্রকৃতপক্ষে জাতীয় সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকার ফলশ্রুতিতে এসব বিভ্রান্তি ও ইতিহাস বিকৃতি সংঘটিত হয়ে আসছে। এ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার আলবদররা যেমন এদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, একাত্তরে যা ঘটেছে তা ছিলো গণ্ডগোল, গৃহযুদ্ধ, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ইত্যাদি অপবিশেষণ নিক্ষেপ করে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে! তেমনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের অজান্তে বা অন্য কোনো কারণে মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও অন্য ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধকে 'মুক্তিযুদ্ধ' না বলে 'মুক্তিসংগ্রাম' ও 'স্বাধীনতা যুদ্ধ' বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঘটাচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে! এছাড়া সরকার নিজেই এক প্রজ্ঞাপনে বলেছিলেন, প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার নামের পূর্বে "বীর মুক্তিযোদ্ধা" লিখতে হবে, অথচ মুক্তিযোদ্ধা সনদে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেখা হয়নি যা সরকারি আদেশটি সরকারই লংঘন করেছেন! অন্যদিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে এ সনদ পাচ্ছে হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকাররও।এসব অসংগতি জাতীয় চেতনা তথা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।
বিবৃতিতে আবীর আহাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশকৃত আমাদের ৮ দফার স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছি। এ প্রেক্ষিতে গত ৬ জুলাই আমরা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে মাননীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় করেছি। তাতে তিনিও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়ে সমর্থন ব্যক্ত করে সংবিধানের কোথায় এসব বিষয়াবলী সংযোজিত করা উচিত, সে বিষয়ে অধিকতর প্রস্তাব দেয়ার জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, যেটার ওপর আমরা কাজ করছি এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশ করা হবে। অথচ বিষয়টি ফয়সালা না করেই মুক্তিযোদ্ধা সনদে মুক্তিযুদ্ধের কথা বাদ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে যা বিদ্যমান সংবিধানেরও সুস্পষ্ট লংঘন। সুতরাং রাষ্ট্রীয় বিভ্রান্তি ও ভুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তথা সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা বিকৃতি করছেন বলে তিনি কঠোর ভাষায় এ প্রক্রিয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
" আবীর আহাদ
চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ