চিকিৎসককে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার আচরনে প্রশাসনে ক্ষোভ।sainiktvnews

 

চিকিৎসককে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার আচরনে প্রশাসনে ক্ষোভ
ছবিঃসংগৃহীত 

চিকিৎসককে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার আচরনে প্রশাসনে ক্ষোভ।স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা এই দেশে হাসপাতালে কর্মরত একজন চিকিৎসককে “মালাউনের বাচ্চা’’সহ অশ্রাব্য ভাষায় একজন সাবেক অধ্যাপক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখে গালাগাল করায় প্রশাসনসহ সর্বত্র তোলপাড় ও তীব্র অসন্তোস দেখা দিয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তর দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ ভুক্তভোগী চিকিৎসক। ঘটনার পর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার এমন আচরণ উপজেলার সর্বত্র টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে।


প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা মৎস্য অফিসার ও ভুক্তভোগী চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডা. অর্ণব সাহা হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় অবস্থান কালে তার হাসপাতালের চেম্বারে চেয়ারে বসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক অধ্যাপক লিয়াকত আলী হাওলাদার। তার সাথে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক সরদার।


ডা. অর্নব সাহা রোগী দেখে চেম্বারে আসলে তার চেয়ারে বসা ওই ব্যক্তিকে (লিয়াকত আলী হাওলাদার) বলেন, আপনার রোগী হলে সামনের চেয়ারে এসে বসেন, আমি আপনাদের দেখে দিচ্ছি। চিকিৎসক তাদের সরে বসতে বলায় আকস্মিক রেগে গিয়ে লিয়াকত আলী হাওলাদার তার সাথে বাজে ভাষায় কথা বলেন। এমনকি “তোর মতো ১০জন ডাক্তার এখানে আনতে পারি, তুই জানিস আমি কে? এমন বিভিন্ন অশোভন বাক্য ব্যবহার করেন চিকিৎসকের সঙ্গে। লিয়াকত আলীর কথার সাথে উত্তেজিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন তার সাথে থাকা অপর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক সরদার। চিকিৎকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনমিয়ের সময়ে সেখানে চিকিৎসার জন্য উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আলম। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন তারা।


কক্ষ থেকে বের হবার সময়ে হাসপাতালের অন্য এক স্টাফের কাছে চিকিৎসকের নাম জানতে চান মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী হাওলাদার। ওই চিকিৎসকের নাম অর্নব হালদার বলে ষ্ঠাফ তাকে জানালে “মালাউনের” বাচ্চা এখানে চাকরি করতে আসছে কেন? এভাবেই গালাগাল করতে করতে হাসপাতাল ত্যাগ করেন লিয়াকত আলী হাওলাদার ও সিরাজুল হক সরদার।


একজন মুক্তিযোদ্ধার মুখে অনাকাঙ্খিত ভাষায় চিকিৎসককে গালমন্দর খবর মুহুর্তের মধ্যে হাসপাতাল চত্তরে ছড়িয়ে পরে। ঘটনাটি রাতের মধ্যেই শহরে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাষায় ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেন।এ বিষয়ে ডা. অর্ণব সাহা বলেন, দোতলা থেকে রোগী দেখার পরে ওই ভদ্র লোকের (মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলীর) সাথে আমার কথা কাটাকাটি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। যদিও আমি এখানে একমাস আগে থেকে কাজ শুরু করেছি, তাই তাদের চিনতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি আর কিছু না বাড়িয়ে ঘটনা চেপে যাবার অনুরোধ করেন।


প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা মৎস্য অফিসার বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে চিনতে পারেন নি। চিকিৎসকের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং মালাউন বলে গালমন্দ করা কথা তিনি নিজ কানে শুনেছেন। যা একটি স্বাধীন অ-সাম্প্রদায়িক দেশের মুক্তিযোদ্ধার কথা হতে পারে না। ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে বলেও জানান তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, তারা প্রেসার মাপাতে চেম্বারে বসলে ডাক্তারের চেম্বারে এসে তাদের চেয়ারে বসা দেখে বেঞ্চে গিয়ে বসতে বলেন। তখন তার মতো ১০ জন ডাক্তার তার ছাত্র আছে জানিয়ে বলেন, আমরা তো বয়স্ক মানুষ তোমার বাবার বয়সী কেন আমাদের সাথে এমন আচরণ করছো। আমাদের পরিচয়টাও জানতে চায়নি ওই ডাক্তার। ডাক্তারের খারাপ আচরনের বিষয়টি হাসপাতাল প্রধান ডা. বকতিয়ার আল মামুনকে জানানো হয়েছে। তিনি কোন গালামন্দ করেননি জানিয়ে উদাহরণ হিসেবে প্রশ্ন রেখে বলেন-আগৈলঝাড়ায় ৫৬% মালাউন। কর্মজীবনেও তিনি কাউকে কোন গালমন্দ করেননি।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, বিষয়টি শুনে তিনি ডা. অর্ণব সাহার কাছ থেকে জেনেছেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহিী অফিসারকে অবহিত করেছেন।


উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানতে পেরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুরে কাছে ফোনে বিস্তারিত জেনে উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন। তবে ওই চিকিৎসক বা হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা বখতিয়ার আল মামুন লিখিতভাবে তাকে কিছু জানাননি। চেয়ারম্যান বলেছেন ওই মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে কারন জানবেন। কোন লিখিত অভিযোগ পেলে বিভাগীয় তদন্ত করে দেখা হবে।


বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ত্রাণ ও পুণর্বাসন কমান্ডার ও আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, বিষয়টি ইউএনওসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কিছু জানানো হয়নি।’

সূত্রঃবরিশায়াল টাইমস

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম