মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার sainiktvnews


মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার।রাজশাহীতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৫)। এসময় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট তৈরির সরঞ্জাম, দেশি-বিদেশি ভুয়া দলিল দস্তাবেজ উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহী র‌্যাব-৫ মোল্লাাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা রাজপাড়া থানার পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব-৫ এসব তথ্য জানায়।গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নগরীর পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত কাবিল উদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান ওরফে রেজাউল (৬৬) ও কোর্টবুলনপুর এলাকার রাজিব হোসেনের ছেলে শেখ রেজওয়ানুল করিম ওরফে সানিক (২২)। আনিসুর জাল কাগজপত্র তৈরির মূল কারিগর। আর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন সানিক।

মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার sainiktvnews


র‌্যাব জানায়, উদ্ধার হওয়া কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে- স্বাধীনতা সংগ্রামের ভুয়া ১৪টি সনদপত্র, JOY BANGLA লেখা সম্বলিত ফাঁকা ১৫টি সনদ, ২ হাজার ৫৪৮টি বাংলাদেশি স্ট্যাম্প, ৮৩৩টি পাকিস্তানি বিভিন্ন অঙ্কের স্ট্যাম্প, ভারতীয় বিভিন্ন অঙ্কের ২৫৩টি স্ট্যাম্প, জাল-জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামীয় ও পদবী সম্বলিত ভুয়া সিল-২০৫টি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত ২টি ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত ২টি (যার সাহায্যে স্ট্যাম্পের পিছনে জল ছাপ দিয়া জালিয়াতির সাহায্যে বিভিন্ন ভুয়া দলিল প্রনয়ণ করা হয়), জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত দোয়াত কলম-৩টি, দোয়াত কালি-১টি, স্ট্যাম্প প্যাড-১টি, মোবাইল-২ টি, সীমকার্ড-৪টি।আরও জানায়, আনিছুর রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি সুকৌশলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণিক হিসেবে ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার JOY BANGLA লেখা সনদও প্রস্তুত করে দিতেন। তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও দলিল তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। তার নিকট কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, ভুয়া জামানত, দলিল চাইলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তৈরি করে দিতেন। ভুয়া দলিল দ্বারা জমি দখলদারদের পুরাতন পাকিস্তানি আমলের দলিলও নিজস্ব পন্থায় প্রস্তুত করে দিতেন।জাল দলিল প্রস্তুতির জন্য তিনি কালিকলম ব্যবহার করতেন। কারণ পাকিস্তান আমলে কালি-কলমে দলিল লেখা হতো। তিনি পুরাতন দলিল প্রস্তুত করণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সিল নিজে প্রস্তুত করে ব্যবহার করতেন। তার কাছে বিভিন্ন কর্মকর্তার সর্বমোট ২০৫টি ভুয়া সিলমোহর পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভুয়া জাল দলিল প্রস্তুতকারক হিসেবে দাবি করেন।র‌্যাব আরও জানায়, আনিছুর রহমানের কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভুয়া দলিল প্রস্তুত করতে প্রতারক/জমি দখলকারীরা যোগাযোগ করেন। তিনি এ যাবৎ সহস্রাধিক জাল দলিলসহ বহু মুক্তিযুদ্ধের জাল সনদ প্রস্তুত করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। তিনি বিশেষ কেমিকেল ব্যবহার করে দলিলকে পুরাতন দেখানোর পন্থা আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি জাল দলিল প্রস্তুত করেন যা ধরার উপায় থাকে না। আনিসুর রহমান সম্পর্কে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যার দিকে র‌্যাব ৫ এর একটি দল রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় মো. আনিছুর রহমান ওরফে রেজাউল করিমের বসতবাড়িতে অভিযান চালায়। র‌্যাবের দলটি তার বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই ২ জন ব্যক্তি কৌশলে পালানোর চেষ্টা করে। তবে র‌্যাব সদস্যরা তাদের ধরে ফেলে। এরপর সেখান থেকেই বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন যে, তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে লোক চক্ষুর অন্তরালে এই বাড়িতে গোপনে জাল কাগজপত্র তৈরি করতেন। এবং এগুলো সরবরাহ করে মানুষের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতেন।


এ ঘটনায় রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণা আইনে মামলা হয়েছে।

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম