সচ্ছলরাই পাচ্ছেন বীর নিবাস, বঞ্চিত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে ঘরের জন্য আবেদন করেও মিলছে না বীর নিবাস। অন্যদিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও পাকা বাড়ি থাকার পরেও অনেকে পাচ্ছেন এ ঘর। এ নিয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৯১০ টাকা ব্যয়ে ৫৫ জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা সৈয়দপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সৈয়দপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী। উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের তালিকায় ৩৬ নম্বরে তার নাম রয়েছে। তিন ছেলের মধ্যে একজন প্রবাসী, একজন চাকরিজীবী ও আরেকজন পড়ালেখা করছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি দালান রয়েছে তার। আর্থিক ও ঘরের বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, সামনেরটা পুরাতন বিল্ডিং এটা নতুন করেছি। দুই ছেলে স্বাবলম্বী ও ছোট ছেলে পড়ালেখা করছে। সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পেরে বলেন, যখন আবেদন করেছি তখন আমার আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না।
উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান। তারও রয়েছে সেমিপাকা ঘর। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে সরকারি চাকরিজীবী, ছোট ছেলে ব্যবসায়ী। আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল। বীর নিবাস পাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি ঠিক। কিন্তু আমার ঘর ও আর্থিক সচ্ছলতা দেখে বীর নিবাস পাব না বলেছিল। কিন্তু কেন দিচ্ছে সেটা জানি না।
এদিকে অসচ্ছল ও দরিদ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি ঘরের মধ্যে সামনের রুমে শুয়ে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম। অনেকটা মৃত্যুশয্যায়, চোখে দেখতে পান না। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনকে বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম (৭৪)। জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করলেও, আর্থিকভাবে স্বাধীন হতে পারেননি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও ছেলের বউদের নিয়ে ছোট্ট একটি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বড় ছেলের মানসিক সমস্যা। ছোট ছেলে দিনমজুর। যখন শুনেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অস্বচ্ছল ও অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সরকারিভাবে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে, তখন মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলমের মনে আশা জাগে। হয়তো মরার আগে এই ঘরটিতে একটি দালান ঘর দেখে যেতে পারবে। কিন্তু জায়গার পরিমাণ কম হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ঘরের জন্য আবেদন করেও মিলছে না ঘর।
তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, জায়গার পরিমাণ কম থাকায় আমরা ঘর পাচ্ছি না। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েও ঘরের বদলে একটু জায়গা কিনে দেওয়ার কথা বললেও তারা তা শোনেনি।
প্রতিবেশি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে আমি ঘর পাচ্ছি তার জন্য আমি খুশি। কিন্তু আমার প্রতিবেশী ও সহযোদ্ধা শফিউল আলম ঘর পাচ্ছেন না বিষয়টি খুবই কষ্টের। প্রকৃত অসচ্ছল ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধারা যেন ঘর পায় এই অনুরোধ জানান তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমি দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাইনি। অনেক অসহায় ও অসচ্ছল ঘর পাচ্ছেন না বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।
স্থানীয়দের দাবি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি যেন পুনরায় তদন্ত করে, যাতে অস্বচ্ছল ও অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীর নিবাস পায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কে এম রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বীর নিবাস পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদন করার সময় অনেকে আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকলেও বর্তমানে অনেকে সচ্ছল হয়ে গেছেন। এই বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করা হবে।