বীর নিবাসে’ ২০ ফাটল।২০১৮ সালে, আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ গ্রামের নারী মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেবের জন্য সরকার 'বীর নিবাস' নামে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভূমিহীন ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করে। স্বপ্নের সেই বাড়ি পেয়ে খুশি হন এই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই বাড়িটি তাকে নিরাপদে ও শান্তিতে থাকার জন্য একটু আশ্রয় দিয়েছে। দিয়েছেন সম্মান, সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু স্বপ্নের সেই বাড়িতে মাত্র চার বছরেই ফাটল ধরেছে। প্লাস্টার খসে পড়ছে। বৃষ্টির পানি ঝরে পড়ছে ঘরে। প্লাস্টার পড়ে আহত হয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
শর্মিলা দেব আমোদাবাদ গ্রামের মহেন্দ্র দেবের মেয়ে। তারা দুই বোন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আরেক বোন গীতা দেব। আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের মাঝামাঝি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের নারী মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেবের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করে। প্রায় 6.5 লাখ টাকা। . এ সময় ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে উপজেলায় একটি বীরের বাড়ি দেওয়া হয়। শর্মিলা দেব তাদের একজন। বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি প্রশস্ত বারান্দা এবং একটি টয়লেট রয়েছে। হাঁস ও মুরগি পালনের জন্য আলাদা শেড ও একটি নলকূপ। বাড়ি নির্মাণের ৬/৭ মাস পর ছোট ছোট ফাটল দেখা দেয়, যা দিন দিন বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের দেয়ালে, বাইরে, বাথরুমে ছোট-বড় প্রায় ২০টি ফাটল রয়েছে। মেঝেতে বিভিন্ন স্থানে ফাটল। ছাদের বেশ কিছু জায়গায় প্লাস্টার খসে পড়েছে। রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। বাথরুমে ফাটল দিয়ে পানি পড়ল। এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা শর্মিলা দেব বলেন, আমার কোনো ছেলে নেই। চার মেয়েরা. তার স্বামী মারা গেছে প্রায় 18 বছর আগে। ঘরের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু সরকারি বাড়ি পাওয়ার ৬/৭ মাস পর ওই বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। এরপর বাড়ির ঠিকাদার ইসমাইল হোসেনকে বাড়িতে এনে ফাটল দেখাই। কয়েকবার ফোনে বললাম। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। দিন দিন ফাটল বাড়ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ঘর ফাটছে না, মনে হয় আমার হৃদয় ফাটল। আস্তরণ ভেঙ্গে মাথায় পড়লে আমি ভয় পাই। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে তিনি একজন মহিলা হওয়ার কারণে বাড়ির কাজ ঠিকমতো করতেন না। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ জামশেদ শাহ বলেন, নির্মাণের চার বছরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে ফাটল দেখা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। তিনিসহ উপজেলায় নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন মাত্র তিনজন। তারা দুই বোন। তিনি বলেন, আখাউড়ায় প্রায় সাত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, সঠিকভাবে সারিয়ে তোলা না হলে ফাটল দেখা দিতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগজাই মারমা বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।