বীর মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি ছাড়া দাদন ব্যবসায়ীদের হুমকিতে

 বগুড়ার গাবতলীর তেলিহাটা সুখানপুকুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজার রহমান স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসার জন্য দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তার কাছে ২৬ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিলেও ঋণ শোধ হয়নি। দাদন ব্যবসায়ীদের হুমকিতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। 


বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মাহফুজার রহমান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি ছাড়া দাদন ব্যবসায়ীদের হুমকিতে
ছবিঃ সংগৃহীত 


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসার জন্য দাদন ব্যবসায়ী গাবতলী বাইগুনির মুকুল হোসেন, সাহবাজপুর গোবিন্দগঞ্জের লাভলু বেপারী ও মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে দাদন ব্যবসায়ীরা। তারা মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্রসহ সোনালী ব্যাংক সোনাতলা শাখার ১৫টি চেকের পাতায় স্বাক্ষর করে নেয়। তারপর ঋণ পরিশোধের নামে প্রতারণা করে তার নামে ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নেয়। পরে তারা স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ৭০ পাতার চেকের বই তুলে নেয়। সেই চেকের পাতা দিয়ে তার নামে থাকা মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও বোনাস তুলে আত্মসাৎ করে। তিনি তার মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পর বর্ধিত টাকা ফেরত চাইতে গেলে দাদন ব্যবসায়ীরা তাকে গালিগালাজ করেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় তার স্ত্রী ও সন্তান মারা যায়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিলেও মেলেনি প্রতিকার।


পরে দাদন ব্যবসায়ীরা তার স্বাক্ষর জাল করে ও মোবাইল নাম্বার বদলিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও বোনাস তুলে আত্মসাৎ করে। পরে দাদন ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের যোগসাজসে বীর মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র জমা দিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেয়। একই কায়দায় স্বাক্ষর জাল করে এই চক্র ১০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এভাবে মোট ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।


মাহফুজার রহমানের অভিযোগ, গত ১৩ এপ্রিল তিনি দাদন ব্যবসায়ী মুকুল ও লাভলুর কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও ঋণ পরিশোধের পর বাকি টাকা ফেরত চাইলে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা তাকে মারধরও করে। স্থানীয়রা তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। 


হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনি বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলার পর থেকে দাদন ব্যবসায়ীরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 


তিনি মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র ফেরতসহ তার নামে জাল করে তোলা মুক্তিযোদ্ধার ভাতা-বোনাস ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর অনুরোধ জানিয়েছেন। 


সংবাদ সম্মেলনে তার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে উপস্থিত ছিলেন।


অভিযোগের বিষয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।


গাবতলী থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। মাহফুজার রহমান এ ব্যাপারে কখনও থানায় আসেননি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম