সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে বেশিরভাগ কেন্দ্রে জালভোটের মহোৎসব চলছে। নৌকা মার্কার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, অনেক কেন্দ্রে ভোটার না থাকলেও ভোট কাস্টের সংখ্যা অনেক বেশি। এ ছাড়া ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে পথে পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত নৌকা প্রার্থীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সকালের দিকে নৌকা সমর্থিতরা বেশ কয়েকটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টা ও ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলেও প্রশাসনের চাপে সেটি সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে হারামিয়া, বাউরিয়া, নাজিরহাট, পৌরসভা, রহমতপুর, আজিমপুর, মগধরা ও মুছাপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র রয়েছে।সকাল ১০টার দিকে প্রশাসনের চাপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ১১টার পর অনেক কেন্দ্র থেকে আনারস প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতিও কম ছিল। আস্তে আস্তে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়লেও বেশিরভাগ কেন্দ্রে ব্যাপক জালভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, পৌরসভার মেয়র মুক্তাদির মাওলা সেলিমের নেতৃত্বে পৌরসভা এলাকার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে আনারস মার্কার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। এসব কেন্দ্রে ব্যাপক জালভোটের অভিযোগ করেছেন আনারস মার্কার প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে।
কালাপানিয়া ইউনিয়নে ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান সুমন ও কালাপানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলিমুর রেজা টিটুর নেতৃত্বে নৌকা সমর্থিতরা বেশ কয়েকটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে। তারা বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্ট্র্যাইকিং ফোর্সের ঝটিকা অভিযানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে আনারসের এজেন্ট বের করে দিয়ে ব্যাপক জালভোট দিয়েছেন।
সকালে কালাপানিয়া জগত প্রাইমারি স্কুল থেকে আনারস প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আনারস মার্কার প্রার্থীর এজেন্টরা। সন্দ্বীপ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র থেকে আনারস প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ডের রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেও আনারস প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে এজেন্টরা কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে ব্যাপক জালভোট চলছে বলে আনারস মার্কার এজেন্টরা অভিযোগ করেছেন।
বক্তারহাট এলাকা থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা আনারসের এজেন্ট হিসেবে যোগদানের জন্য কেন্দ্রের দিকে রওনা হলে তার ওপর হামলা হয়। তার কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
মগধারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ন্যায়ামস্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আনারস প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও প্রকাশ্যে নৌকার ভোটাররা জালভোট দিচ্ছেন বলে এজেন্টরা অভিযোগ করেছেন।
বেলা ১১টার দিকে সেনেরহাট এলাকায় অ্যাসিড সোহাগ নামে এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে আনারস ও বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাজিরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাইন উদ্দিন মিশন নিজে অবস্থান নিয়ে আনারস প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে ভোট ডাকাতি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আনারস মার্কার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম।
পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ডের অলি মোন্দের গো বাড়ির সামনের ভোটকেন্দ্র থেকে আনারসের এজেন্টের বের করে দিয়ে পৌরসভার মেয়র মোক্তাদের মাওলা সেলিম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে ভোট ডাকাতি করছেন বলেও তিনি যুগান্তরকে জানান।
আনারস মার্কার প্রধান নির্বাচনি কর্মকর্তা রাজিবুল আহমান সুমন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নীড বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রেও ব্যাপক জালভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাউরিয়া, নাজিরহাট, কাচিয়াপাড় এলাকায় স্থানীয় এমপির ভাই জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে বেশিরভাগ কেন্দ্রে জালভোটের মহোৎসব চালাচ্ছেন।
সূত্রঃযোগান্তর