জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট: বিএনপি ও জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাব

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আলোচনার জন্য ফোন করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং সনদ বাস্তবায়ন ও নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো নতুন প্রশ্ন বা সংকট তৈরির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মির্জা ফখরুল জাতির শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মাধ্যমে জনগণের শক্তি ধারণ করে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে। দল নিশ্চিত করেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত ও সনদে বর্ণিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।      

মির্জা ফখরুল জানালেন বিএনপির অবস্থান, জামায়াতের আহ্বানে কী বললেন?

 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট নিয়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আলোচনার জন্য ফোন করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, “আমরা গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি। সেটা আমাদের অবস্থান।” বিএনপির এই অবস্থান স্পষ্ট করে যে, তারা সনদ বাস্তবায়ন ও নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো নতুন প্রশ্ন বা সংকট তৈরির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবে। 

শুক্রবার ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মির্জা ফখরুল ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় গৃহীত এবং ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সব বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যাতে যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি না হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সর্বসম্মতভাবে গৃহীত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রশ্ন বা সংকট সৃষ্টির সব অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী জনগণের শক্তিকে আমরা ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব বিষয়ে অংশীদার ছিলাম, তা অনুযায়ী আমরা সংবিধান ও প্রচলিত আইন মেনে সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরণের আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমন্বয় ও সংলাপের মধ্য দিয়ে সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ তৈরি হয়। তবে নতুন সংকট বা প্রশ্নের সুযোগ তৈরি হলে তা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অবস্থান স্পষ্ট যে, দল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ধরে রাখবে এবং কোনো প্রকার দখলদারী বা বাধা সৃষ্টি সহ্য করবে না।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট ইস্যুতে রাজনৈতিক সমন্বয় ও সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ও জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনার সংস্কৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে দলীয় নীতি ও আদর্শের প্রতি অটল থাকা তাদের মূল প্রতিশ্রুতি। মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটি নিশ্চিত করেছেন, তারা দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী চলবেন এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট সৃষ্টি হবে না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটি জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা নতুন প্রশ্ন বা শর্ত ছাড়াই সনদ বাস্তবায়নের সব বিষয় মেনে চলবে। এভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। দল আশা করছে, সরকারের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

সার্বিকভাবে, এই আলোচনার প্রস্তাব এবং বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান দেখাচ্ছে যে, রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের পথ তৈরি করতে প্রস্তুত। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম