জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ঘোষণার পরই নড়েচড়ে বিএনপি—তারেক রহমানের নেতৃত্বে গুলশানে জরুরি বৈঠক

 জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ইস্যুতে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণে একইদিনে নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা আসার পরই বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—জাতীয় স্থায়ী কমিটি বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি এই বৈঠকে নির্বাচন ও গণভোট বিষয়ে নিজেদের পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করছে। 

 

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট ঘোষণার পরই নড়েচড়ে বিএনপি—তারেক রহমানের নেতৃত্বে গুলশানে জরুরি বৈঠক


 

বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণার পর মুহূর্তেই বিএনপি তাদের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুরু হয় এই বৈঠক, যেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।

🔹 বৈঠকের সূচনা ও পরিবেশ

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বৈঠকটি হঠাৎ করেই আহ্বান করা হয় এবং সন্ধ্যার আগেই দলের শীর্ষ নেতাদের এতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই তারেক রহমান দলের সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে বলেন—

“আমাদের এখন পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে হবে—গণভোট ও নির্বাচনের দিন একই হলে বিএনপি কী কৌশল নেবে, জনগণকে কী বার্তা দেওয়া হবে।”

বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রায় সব শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। 

আরও পড়ুন  আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ভূমিকা


🔹 কেন এই বৈঠক?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকটি ড. ইউনূসের ভাষণের পর সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবেই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঘোষণা দেন—

“আগামী নির্বাচন ও জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে।”

এই ঘোষণার পরই বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত যোগাযোগ শুরু হয় এবং সন্ধ্যার মধ্যেই আহ্বান করা হয় এই “জরুরি বৈঠক”।

বিএনপি বরাবরই দাবি করে আসছিল, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করতে হবে। দলটি মনে করছে, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক দাবিই বাস্তবায়নের পথে। তাই এখন প্রশ্ন—বিএনপি কি নির্বাচনে অংশ নেবে, নাকি শর্তসাপেক্ষ অংশগ্রহণের রূপরেখা দেবে?


🔹 বৈঠকে কী আলোচনা হলো?

বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বলছে, বৈঠকে তিনটি বড় প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়—

  1. গণভোট ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের কৌশল: জনগণের ভোটে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা।

  2. আন্তর্জাতিক যোগাযোগ জোরদার: যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের রূপরেখা।

  3. দেশে আন্দোলন পুনরায় শুরু: গণভোটের আগে দেশজুড়ে জনসংযোগ কর্মসূচি চালানোর প্রস্তাব।

তারেক রহমান নীতিনির্ধারণী বক্তব্যে বলেন,

“এটি বিএনপির জন্য নতুন সুযোগ। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, তবে কৌশল হতে হবে বাস্তবমুখী। জনগণের ভোটে পরিবর্তন আনতে হলে মাঠে থাকতে হবে।” 

আরও পড়ুন  পেট্রোল বোমাসহ দুই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আটক


🔹 রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. নাসির উদ্দিন খান মনে করেন,

“এই বৈঠক মূলত বিএনপির কৌশলগত অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। তারা চাইছে দেখাতে যে, দলটি এখন আর কেবল আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শাসন পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছে।”

আরেকজন বিশ্লেষক বলেন,

“তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়ায় এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—দলের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এখনও তার হাতেই রয়েছে।”


🔹 পরবর্তী ঘোষণা আসছে

বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার বা শনিবার দলের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
সম্ভবত এই ঘোষণায় থাকবে—

  • নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত,

  • গণভোট নিয়ে দলের অবস্থান,

  • এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান।

এদিকে, গুলশান ও নয়াপল্টন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে। বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে #BNPMeeting এবং #TariqueRahman ট্রেন্ড করছে।


নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম