জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিযোগ করেছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গুলশানে দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও রাজনৈতিক দলের মুক্ত প্রচারণা বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় তারা আশাহত। বৈঠকে দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হলে সংসদ স্থায়ী হবে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ। জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ভাষণের সমালোচনা করে বলেন, “অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে নিশ্চিত হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেননি।”
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বাসভবনে অনুষ্ঠিত জরুরি প্রেসিডিয়াম বৈঠকে আনিসুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সেখানে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
🔹 ‘নির্বাচনের রূপরেখা অনুপস্থিত’
বৈঠকে আনিসুল ইসলাম বলেন,
“জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আমরা কিছুটা আশাবাদী হলেও, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট ছিল না। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, রাজনৈতিক দলের নির্বিঘ্ন প্রচার, সমান সুযোগ নিশ্চিত করা—এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের সময় মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের ঘোষণা আসা উচিত ছিল। এসব বাধা না সরালে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কখনও সম্ভব নয়।”
আরও পড়ুন জুলাই সনদের পথে এগোচ্ছে এনসিপি
🔹 ‘অংশগ্রহণমূলক না হলে সংসদ ক্ষণস্থায়ী’
দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন,
“জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনমুখী দল। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। যদি কোনোভাবে নির্বাচন একপাক্ষিক হয়, তাহলে পরবর্তী সংসদ স্থায়ী হতে পারবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ দরকার, পাশাপাশি বড় রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।”
🔹 দলের অভ্যন্তরীণ বার্তা
জাপা একাংশের এই বৈঠক মূলত দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে আহ্বান করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ অন্যান্য নেতারা।
সূত্র জানায়, আনিসুল ইসলাম ও রুহুল আমিন হাওলাদার দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে রাখার পরামর্শ দেন, তবে তারা চান—নির্বাচন কমিশন ও প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা প্রদান করুক।
একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন,
“আমরা চাই, নির্বাচন হোক, তবে সেটা যেন প্রহসনে পরিণত না হয়। জাতির মানুষ আর একপাক্ষিক ভোট দেখতে চায় না।”
🔹 জাপার দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাপা এখন একটি দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থানে রয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘নির্বাচনী নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ভারসাম্য’ বিষয়ে নিশ্চয়তা না থাকায় দলটি অনিশ্চয়তায় আছে।
রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন,
“আনিসুল ইসলামের বক্তব্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে জাপা সরকার ও প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত না হলে তারা কৌশলগতভাবে দূরে থাকতে পারে।”
আরও পড়ুন গণঅধিকার পরিষদের মশাল মিছিলে তীব্র অভিযোগ
🔹 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক প্রভাব
জাপা একাংশ এখন দুইটি দিক নিয়ে ভাবছে—
-
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া।
-
বিএনপি, নাগরিক ঐক্যসহ মধ্যম রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে একটি “জাতীয় ঐক্য সভা” আয়োজনের প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
দলের এক নেতা বলেন,
“যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে জাপা ইতিহাসের ভুল পথে হাঁটবে না। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে আছি।”
.png)