মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির মনোনয়ন বিতর্ক নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদের অনুসারীরা মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মহাসড়কে শুয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন এলাকায় জনপ্রিয় নন এবং দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানব না’। এ ঘটনার মাধ্যমে দলের তৃণমূলের অনুভূতি কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে এবং দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন বিতর্কের মধ্যেই বিএনপি গত সোমবার সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেছে। এর আগে, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গাংনী উপজেলা শহরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও ঘটেছিল, যার ফলে ১০ জন আহত হন। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
গাংনীতে বিএনপি মনোনয়ন বিতর্ক: তৃণমূলের তীব্র প্রতিক্রিয়া
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বিতর্ক নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় গাংনী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদের অনুসারীরা মহাসড়কে শুয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা দাবি করেছেন, মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন এলাকায় জনপ্রিয় নন এবং দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই।
বিক্ষোভকারীরা দুপুর তিনটার দিকে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের পাশে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে মহাসড়কে শুয়ে বসে তারা স্লোগান দেন, ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানব না’। তাদের এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো, মেহেরপুর-২ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদকে মনোনয়ন প্রদান করা।
বিক্ষোভ ও সমাবেশ
বিক্ষোভ শেষে নেতা-কর্মীরা একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অংশ নেন। জাভেদ মাসুদ বলেন, “তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমার পাশে রয়েছেন। তাঁরা চান, দলের প্রতীক ধানের শীষ যেন প্রকৃত জনপ্রিয় প্রার্থীর হাতে থাকে।” তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অনুরোধ করেন, তৃণমূলের অনুভূতিগুলো বিবেচনা করতে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়ন প্রদানের প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা হলে এটি দলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যদি দাবি আদায় না হয়, তবে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মনোনীত প্রার্থীর বক্তব্য
মেহেরপুর-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন বলেন, “এটি কয়েকজন অসন্তুষ্ট কর্মীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে দলের সকল সদস্য নির্বাচনে সমন্বিতভাবে কাজ করবেন এবং দলের প্রতীক ধানের শীষ সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখবেন।
প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
বিএনপি গত সোমবার জাতীয় সংসদের ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। মেহেরপুর–১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাসুদ অরুণ এবং মেহেরপুর–২ (গাংনী) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আমজাদ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এর আগে, ৪ নভেম্বর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গাংনী উপজেলা শহরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। বর্তমান বিক্ষোভ সেই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটেই সংঘটিত হচ্ছে, যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
তৃণমূলের ভূমিকা ও দাবি
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন যে, মনোনীত প্রার্থী এলাকায় জনপ্রিয় নন এবং দলের নীতি ও কর্মসূচিতে তৃণমূলের সহায়তা বা অংশগ্রহণ নেই। তারা মনে করছেন, দলের নীতিনির্ধারকরা যদি তৃণমূলের মতামত গ্রহণ না করেন, তাহলে দলের কার্যক্রমে বিভ্রান্তি ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জাভেদ মাসুদ বলেন, “দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করব, প্রকৃত জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হোক।”
ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় ও দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তারা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। এর মধ্যে মহাসড়কে শুয়ে অবস্থান, গণস্লোগান এবং জনগণের সমর্থন জোগানো থাকবে। এটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, মেহেরপুর-২ আসনের মনোনয়ন বিতর্ক কেবল কেন্দ্রীয় নয়, স্থানীয় স্তরেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
.png)