বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা—১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান—একই সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজিত ‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দুর্নীতি, স্বার্থপর শাসন এবং কার্যকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে ব্যর্থতা এই দুটি গণআন্দোলনের পটভূমি তৈরি করেছে। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানকে উল্লেখ করে বলেন, কল্যাণমুখী রাজনীতি ও শক্তিশালী রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের মাধ্যমে তিনি দেশের জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি স্থাপন করেছেন। এছাড়া আলোচনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান, রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও বিশ্লেষণ করা হয়।
বিপ্লব থেকে গণঅভ্যুত্থান: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দুটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনের প্রতিফলন। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে একটি গোলটেবিল আলোচনায় বলেছেন, এই দুটি ঘটনা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের কার্যকর কাঠামো প্রতিষ্ঠা ব্যর্থ হওয়ায়, দুর্নীতি ও স্বার্থপর শাসন এই আন্দোলনের পেছনের মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
১৯৭৫ সালের বিপ্লব ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল স্বাধীনতার পর দেশের দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে। সেই সময় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুর্নীতি, লুটপাট এবং রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে মগ্ন ছিলেন। ফলে সাধারণ জনগণ ও সেনা বাহিনী এক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন,
“১৯৭৫ সালের বিপ্লবের পটভূমি ও ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমির মধ্যে খুব সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মূল কারণ হলো—সেই সময়ও জনগণ ও নেতৃত্বকে কার্যকর রাষ্ট্র কাঠামো না পাওয়ার কারণে ক্ষোভে ভুগছিল।”
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানও সামাজিক ও রাজনৈতিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বার্থপর নীতি এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত হয়েছে। আসিফ মাহমুদ বিশ্লেষণ করেন, এই গণঅভ্যুত্থান মূলত শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে। তারা একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমানাধিকারের রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন,
“প্রকৃতপক্ষে, এই দুটি গণআন্দোলনের পেছনের পরিস্থিতির মধ্যে খুব সামান্য পার্থক্য রয়েছে। মূল লক্ষ্য জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।”
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান
আলোচনায় আসিফ মাহমুদ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথাও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, জিয়াউর রহমান কল্যাণমুখী রাজনীতি প্রবর্তন করেন এবং একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র কাঠামো গঠনে কাজ করেন। তাঁর স্থাপিত কাঠামো আজও দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভিত্তি হিসেবে প্রাসঙ্গিক।
“জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টা এবং নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সংহতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন আসিফ।
সামাজিক ও রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তি
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, স্বাধীনতার পর সরকারের বিভিন্ন ত্রুটি এবং দুর্নীতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তিই ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল কারণ। তিনি বলেন, জনগণ যখন দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছ ও কার্যকর রাষ্ট্র কাঠামো পায়নি, তখন তারা পুনরায় আন্দোলনের পথে যায়।
“যে সামাজিক-রাজনৈতিক অনিয়ম ১৯৭৫ সালে ঘটেছিল, সেই একই ধরনের অনিয়ম আজও আমাদের রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান,” তিনি উল্লেখ করেন।
গোলটেবিল আলোচনায় শিক্ষকদের ভূমিকা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় শিক্ষকদের অবদান বিশেষভাবে আলোচিত হয়। আসিফ মাহমুদ বলেন, শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে পদোন্নতি ও সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রভাব কমাতে কাজ করেছেন। তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম নৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা অর্জন করছে।
রাজনৈতিক দল ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডও আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। আসিফ মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হলো জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘমেয়াদি দুর্নীতি এবং স্বার্থপর নীতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
.png)