এপস্টেইন কাণ্ডে নতুন ই-মেইল ফাঁস, ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত চাইলেন ট্রাম্প

  জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সম্পর্ক নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই উদ্যোগ এমন সময়ে এসেছে, যখন এপস্টেইনের ফাঁস হওয়া নতুন ই-মেইলে ট্রাম্পের নাম একাধিকবার উঠে এসেছে এবং তার ওপর চাপ বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করে ট্রাম্প জনমতকে ভিন্ন দিকে সরাতে চাইছেন। ইতোমধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে এপস্টেইনের ই-মেইলগুলোতে যুবতীদের নিয়ে ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিতও মিলেছে, যা নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। 

 

এপস্টেইন কাণ্ডে নতুন ই-মেইল ফাঁস, ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্ত চাইলেন ট্রাম্প


 

যৌন নিপীড়নকারী ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কী ধরনের সম্পর্ক ছিল—এ প্রশ্নে নতুন করে তদন্তের দাবি তুলেছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানদের প্রতি এ তদন্ত শুরুর আহ্বান জানান। তার বক্তব্যের পর মার্কিন বিচার বিভাগ ক্লিনটনকে ঘিরে একটি প্রাথমিক তদন্তও শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

ট্রাম্পের এই দাবি এমন এক সময় সামনে আসে, যখন এপস্টেইনের ফাঁস হওয়া নতুন ই-মেইলগুলোতে ট্রাম্পের নাম একাধিকবার এসেছে এবং তার সঙ্গে সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশ মনে করছেন—নিজেকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্ক আড়াল করতেই ট্রাম্প ক্লিনটনের দিকে তীর ছুড়েছেন। 

আরও পড়ুন  বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের অনুপ্রবেশ নজরদারি কেন জোরদার?

নতুন প্রকাশিত ই-মেইলগুলোর একটি অংশে দেখা গেছে, এপস্টেইন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল এবং ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ লেখক মাইকেল ওলফকে প্রায় ১৫ বছরের ব্যবধানে বহু ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন। এসব ই-মেইলে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ রয়েছে এবং একাধিক ঘটনায় ট্রাম্পের উপস্থিতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এপস্টেইনের প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে, এবং ই-মেইলগুলোতে দেখা যায়—এই মেয়েদের বিষয়ে ট্রাম্প অবগত ছিলেন। এমনকি তিনি এক কিশোরীকে নিজের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ রয়েছে।

এপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন বাড়তে থাকায় ট্রাম্প এখন পাল্টা আক্রমণের কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করছে মার্কিন রাজনৈতিক মহল। বিল ক্লিনটনের সঙ্গে এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠতা অতীতেও আলোচিত হয়েছিল। তবে ট্রাম্প এবার সরাসরি বিচার বিভাগ ও এফবিআইকে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানোয় বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

শুধু ক্লিনটনই নয়, জেপি মরগান চেজের নির্বাহী কর্মকর্তা এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারসের বিরুদ্ধেও তদন্ত দাবি করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, সামারস বিল ক্লিনটনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন এবং জেপি মরগান দীর্ঘদিন ধরে এপস্টেইনের আর্থিক লেনদেনে ভূমিকা রেখেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, এপস্টেইনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মামলাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক তৈরি করে আসছে। ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে কারাবন্দী অবস্থায় এপস্টেইন আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যুর রহস্য নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল ইতোমধ্যে ২০ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন এবং তিনি বর্তমানে কারাগারে দণ্ড ভোগ করছেন। 

আরও পড়ুন সৌদি–যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা চুক্তি নতুন মোড় নিচ্ছে: এফ-৩৫ আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসন

নতুন ই-মেইল ফাঁসের ঘটনায় আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে এসব কেলেঙ্কারি ব্যবহার করার অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। যদিও ক্লিনটন তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, কিন্তু বিচার বিভাগের তদন্ত শুরুর পর পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দেখার বিষয়।

এপস্টেইন কাণ্ডের মতো আলোচিত ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নির্বাচনের বছর সামনে রেখে রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ। নিজেকে ঘিরে ওঠা বিতর্ক থামাতে এবং জনমত অন্যদিকে সরাতে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তাকে সাময়িক সুবিধা দিতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এই তদন্ত কার কতটা ক্ষতি বা লাভ করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।


নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম