মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সৌদি আরবের কাছে লকহিড মার্টিন নির্মিত উন্নতমানের এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়টি তিনি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরুর পরিকল্পনার কথাও নিশ্চিত করেছেন তিনি। সম্ভাবনা রয়েছে—আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে এই সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, যেখানে চীনের প্রযুক্তি অনুপ্রবেশের ঝুঁকি উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে সৌদি আরবের সঙ্গে বহুল আলোচিত এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান বিক্রয় চুক্তির বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সৌদি সরকার লকহিড মার্টিন নির্মিত উন্নতমানের যুদ্ধবিমান কেনার প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে। এই আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভাব্য বিক্রয় চুক্তির পথ খোলা রেখেছে।
ট্রাম্প বলেন, “সৌদি আরব অনেকগুলো এফ-৩৫ কিনতে চায়। তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জেট সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে বিবেচনা করছি।” তাঁর এই মন্তব্যের পর মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সৌদি আরবের সামরিক সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে, যা অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
আরও পড়ুন ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের রসিকতায় চমকে গেলেন আল–শারা
এদিকে, এই সম্ভাব্য অস্ত্র বিক্রয় চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নতমানের এফ-৩৫’র স্টেলথ প্রযুক্তি ও সেন্সর সিস্টেম চীনের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ—সৌদি আরবের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক ও সামরিক সহযোগিতা গত এক দশকে দ্রুত বেড়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই চুক্তি সম্পন্ন হলে চীনের প্রযুক্তিগত অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরুর পরিকল্পনার কথাও নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “অন্যান্য দেশ যেমন পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করেছে, আমরাও সেই পথে এগোতে পারি।” তবে এসব পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র কি পারমাণবিক ওয়ারহেড বিস্ফোরণ ঘটাবে কি না—এ বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্থিতিশীলতার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং সম্ভাব্য এফ-৩৫ বিক্রয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি দুই দেশের নতুন সামরিক অংশীদারত্বের অংশ হিসেবে আরও বেশ কয়েকটি আধুনিক অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনাও রয়েছে।
আরও পড়ুন PTI Protesters Clash with Security Forces at D-Chowk
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এফ-৩৫ বিক্রি হলে সৌদি আরব হবে মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় দেশ, যার কাছে এই অত্যাধুনিক স্টেলথ জেট পৌঁছাবে। এর আগে শুধুমাত্র ইসরায়েল এই বিমান পেয়েছিল। ফলে সৌদি আরবের সামরিক সক্ষমতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব উভয়ই নতুন মোড় নেবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এদিকে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এটি হবে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বৃহত্তম রফতানি চুক্তি। লকহিড মার্টিন ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী। তবে পেন্টাগনের সতর্কতা ও আন্তর্জাতিক চাপ ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে শেষ পর্যন্ত কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
.png)