রাঙামাটিতে কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরির অভিযোগ

 

রাঙামাটিতে কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরির অভিযোগ।

রাঙামাটি কারাগারে কর্মরত এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে স্থায়ী ঠিকানা ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র দাখিল করে মুক্তিযোদ্ধা কৌটায় চট্টগ্রাম কারাগারে চাকুরি নিয়ে এখন রাঙামাটি কারাগারে চাকুরিরত এই কারারক্ষীর নাম মো: রকিবুল ইসলাম। মোবাইল ফোনে বিষয়টি স্বীকার করে রকিবুল জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই জবাব দিবে।


কারাগার সূত্র ও স্থানীয় এক ব্যক্তি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো অভিযোগের সূত্র থেকে জানা গেছে, মো: রকিবুল ইসলাম, পিতা: আনসার প্রামানিক, মাতা: মোছাম্মত জামিলা খাতুন। গ্রাম: গর্জনিয়া, পো: গর্জনিয়া, থানা: রামু, জেলা: কক্সবাজার। এই ঠিকানা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কৌটায় কারারক্ষি হিসেবে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামে কারাগারে কারারক্ষি হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি বদলী হয়ে রাঙামাটি জেলা কারাগারে চাকরিরত রয়েছেন।

আরও পড়ুন ঃবীর মুক্তিযোদ্ধা খ ও গ তালিকা আপীল

সম্প্রতি মো: আশরাফ আলী ও মো. সাগর নামের কক্সবাজারের দুইজন বাসিন্দা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিআইজিসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করার অনুরোধ করেন। এরপর জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ পায়। চিঠিতে বলা হয়, কারারক্ষী রকিবুলের বাবার নাম আনছার প্রামাণিক ও মাতার নাম: জামিলা খাতুন। তিনি কক্সবাজারের রামুর স্থায়ী বাসিন্দা নন। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধাও নন। কারণ রামু উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম নেই। এখানে মোট মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ১৯ জন। রকিবুল ভুয়া ঠিকানা ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই কারারক্ষী পদে চাকরিতে যোগ দেন। প্রকৃত ঠিকানা পাবনার ফরিদপুরের পার ফরিদপুর গ্রামে। অথচ চাকরির তথ্যে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে-রামুর গ্রাম ও ডাকঘর গর্জনিয়া, কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্রে এ ঠিকানার উল্লেখ নেই। চিঠিতে চাকরির জন্য জালিয়াতি করে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট জমা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।জানাগেছে. রকিবুল কক্সবাজারের বা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথাই বলতে পারেন না। এছাড়া তিনি লেখাপড়া করেছেন পাবনার ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমিতে। এমনকি ছুটিতে তিনি কখনো কক্সবাজার যান না। তাহলে তার স্থায়ী ঠিকানা রামুতে কেন-সহকর্মীরা এসব উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানতে পারেন, ২০১৭ সালে মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে এ চাকরি নেন তিনি।

রাঙামাটিতে কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরির অভিযোগ


বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে, কক্সবাজারের রামু উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক জানিয়েছেন, আনসার প্রামানিক নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা গর্জনিয়াতে নেই রামুতেও নেই।


অপরদিকে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, আমাদের পুরো ইউনিয়নে আনসার প্রামানিক নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলোনা এখনও নেই।


গর্জনিয়া ইউনিয়নে বর্তমানে বেচেঁ থাকা একমাত্র মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গর্জনিয়াতে আমরা মোট চারজন মুক্তিযোদ্বা ছিলাম। তারা হলেন, এমদাদ আহমেদ, মো: হাসেম, শহীদ সোলেমান ও আমি নুরুল ইসলাম। তারমধ্যে আমি একমাত্র ভারতে ট্রেনিং নিয়েছি। তিনি বলেন, আনসার প্রামানিক নামের কোনো মুক্তিযোদ্ধা অত্রাঞ্চলে নেই,আগেও ছিলোনা।


বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কারারক্ষী মো: রকিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমি খুবই আপসেট অবস্থায় আছি, আপনারা আমার উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন। অপর একজন গণমাধ্যমকর্মীর কাছে রকিবুল সনদ জালিয়াতির কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদটি দালালের মাধ্যমে বানিয়েছেন। তার বাড়িও রামু নয়। চাকরি পেতে তিনি এ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এটা তিনি ভুল করেছেন।


এদিকে, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কারারক্ষি রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির বিষয়ে একটি অভিযোগ ডিআইজি অফিসে তদন্তাধীন রয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি জেলা কারাগারারের জেলার মো: আতিকুর রহমান।


রাঙামাটি কারাগারে জেল সুপারের দায়িত্বে থাকা রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাইনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, আমি এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অবহিত করবো।

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম