রাজধানীর শাহবাগে এক সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশ বর্তমানে গভীর জাতীয় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও নাজুক। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ যেন রাজনৈতিক ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। দলটির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এই শোভাযাত্রায় কাটাবন, হাতিরপুল, বাংলামোটর, মগবাজার, ওয়্যারলেস গেট হয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত বিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ব্যানার, ফেস্টুন ও দলীয় প্রতীক মাথাল পরে এতে অংশ নেন হাজারো নেতা-কর্মী।
বাংলাদেশ বর্তমানে এক ভীষণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজিত সমাবেশে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আমরা একটা ভীষণ জাতীয় সংকটের মধ্যে আছি। দেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। এই সময়ে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেউ যেন রাজনৈতিক ঐক্যে ফাটল ধরাতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক বিভাজন, অস্থিরতা এবং সন্দেহ–অবিশ্বাসের পরিবেশ দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে এক দশক পূর্তি—ঐতিহ্যবাহী শাহবাগে সমাবেশ
গণসংহতি আন্দোলন তাদের রাজনৈতিক যাত্রার এক দশক পূর্তি উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকেই শাহবাগ এলাকায় নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। স্লোগান, ব্যানার, ফেস্টুন এবং দলীয় প্রতীক ‘মাথাল’ পরে প্রচুর সংখ্যক কর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
সেলফি, ভিডিও, লাইভ—সব মিলিয়ে শাহবাগ এলাকা মুহূর্তেই উৎসবে রূপ নেয়। তবে উৎসবের মধ্যেও সাকির বক্তব্য ছিল অত্যন্ত সতর্কতামূলক এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশকারী।
আরও পড়ুন জুলাই চেতনা ও নতুন বাংলাদেশের পথে ডাকসু ভিপির স্পষ্ট বার্তা
জুলাই জাতীয় সনদ—কেন এটি এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু?
জুলাই জাতীয় সনদকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বহুদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে। এই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন দলের অবস্থান ভিন্ন হওয়ায় জাতীয় ঐক্য বারবার বিঘ্নিত হচ্ছে।
সাকি বলেন—
“জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেকোনো মূল্যেই এই ঐক্য রক্ষা করতে হবে।”
তার এই বক্তব্য সরাসরি ইঙ্গিত দেয় যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় জনগণের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এটি প্রতিরোধে সব দলের দায়িত্ব রয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে সাকির সতর্কতা
জোনায়েদ সাকি তার বক্তব্যে দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন—
“অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের দাম, বেকারত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা—সব মিলিয়ে চরম চাপের মধ্যে রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভক্তি অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে ব্যাহত করে এবং জনগণের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। তাই সব রাজনৈতিক পক্ষকে সম্মিলিতভাবে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।
শোভাযাত্রা—রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কজুড়ে ব্যানার–মাথালের মিছিল
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ শেষে এক বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে কাটাবন, হাতিরপুল, বাংলামোটর, মগবাজার, ওয়্যারলেস গেট ঘুরে কারওয়ান বাজারে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলজুড়ে দেখা যায়:
-
বড় বড় ব্যানার এবং ফেস্টুন
-
দলীয় প্রতীক মাথাল পরে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ
-
বৈষম্য, দুর্নীতি বিরোধী স্লোগান
-
জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি
এই শোভাযাত্রায় তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। অনেকেই বলেন, গণসংহতির মতো দলগুলো তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে—সাকির বক্তব্য গণজাগরণ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন সময়ে যখন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি বিভাজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ঐক্য রক্ষার বার্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তারা বলছেন—
-
সাকির বক্তব্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেবে
-
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হতে পারে
-
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সবাইকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনতে এটি সহায়ক হবে
আরও পড়ুন রহস্যময় নীল ড্রাম খুন
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া
একাধিক কর্মী বলেছেন—
“দেশের অবস্থা ঠিক নেই। মানুষ কষ্টে আছে। আমরা চাই রাজনৈতিক ঐক্য ফিরে আসুক এবং সরকার জনগণের স্বার্থ রক্ষা করুক।”
আরেকজন বলেন—
“আজকের শোভাযাত্রা আমাদের শক্তি দেখিয়েছে। পরিবর্তনের পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”
গণসংহতি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি
দলটি জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন—অর্থনৈতিক সংস্কার—গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার বিষয়ে দেশব্যাপী প্রচারণা চালাবে।
এছাড়া তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে ক্যাম্পেইন এবং নতুন সংগঠনিক কাঠামো গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
.png)