বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-কে তাদের দলীয় প্রতীক ‘শাপলা ফুল’-এর বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে নির্দেশ দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ‘শাপলা’ প্রতীকের মালিকানা নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ইসি ন্যায়সংগত সমাধানের জন্য এনসিপিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন প্রতীক প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কমিশনের মতে, একই প্রতীক বহুদল ব্যবহার করলে ভোটারদের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। ইসির এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কমিশনের নির্দেশ মেনে বিকল্প প্রতীকের বিষয়ে আলোচনা করছে।
শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে সময় বেঁধে দিল ইসি
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক প্রতীক সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি এনসিপিকে (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি) তাদের দলীয় প্রতীক “শাপলা” পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতীকের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ
রাজনৈতিক মহলে “শাপলা” প্রতীকের মালিকানা নিয়ে দুইটি দলের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে।
একই প্রতীক ব্যবহারের কারণে ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, যা নির্বাচনী স্বচ্ছতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে ইসি জানিয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একাধিক বৈঠকেও সমাধান না আসায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কমিশন।
ইসির নির্দেশনা ও সময়সীমা
ইসির ঘোষণায় বলা হয়,
“জাতীয় নাগরিক পার্টিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিকল্প প্রতীকের প্রস্তাব জমা দিতে হবে।”
যদি তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন প্রতীক জমা না দেয়, তবে কমিশন নিজস্ব ক্ষমতাবলে তাদের জন্য উপযুক্ত প্রতীক নির্ধারণ করবে।
এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানামুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
এনসিপির অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইসির সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করছে এবং নতুন প্রতীক নিয়ে আলোচনায় বসেছে।
দলের মহাসচিব বলেন—
“আমরা চাই না, কোনো কারণে জনগণের ভোটে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হোক। তবে শাপলা প্রতীকের সঙ্গে আমাদের আবেগ ও ইতিহাস জড়িয়ে আছে।”
তারা বিকল্প প্রতীকের তালিকা তৈরি করে শিগগিরই কমিশনে পাঠাবে বলে নিশ্চিত করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকরা বলছেন,
বাংলাদেশে প্রতীকের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
একটি প্রতীক শুধু নির্বাচনের প্রতীক নয়, এটি দলের ঐতিহ্য ও জনগণের সঙ্গে সংযোগের প্রতিফলন।
তাই হঠাৎ করে প্রতীক পরিবর্তন দলীয় পরিচিতি ও ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে ইসির সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেও অনেকে মনে করেন।
প্রতীকের পুনর্বিন্যাসে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা
ইসি ইতিমধ্যে প্রতীকের তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দুটি দল এক বা প্রায় একই প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না।
এছাড়া দলগুলিকে তাদের প্রতীকের সাংস্কৃতিক বা ঐতিহাসিক তাৎপর্যও ব্যাখ্যা করতে হবে।
এই প্রক্রিয়া শেষ হলে ২০২6 সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন প্রতীক তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন, “শাপলা” প্রতীকটি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবেও পরিচিত — তাই সেটি নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা অনুচিত।
অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন, প্রতীক পরিবর্তন হলে দলীয় পরিচয় নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ রাজনীতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
দলীয় প্রতীক নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ থেকে মুক্তি দিতে এটি হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান।
এনসিপি যদি সময়মতো বিকল্প প্রতীক নির্ধারণ করতে পারে, তাহলে এটি গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও নির্বাচনী স্বচ্ছতার জন্য ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে।